পরস্পর আবদ্ধ পাঁচটি রিংয়ের সমন্বয়ে তৈরি অলিম্পিক গেমের লোগো কে না দেখেছে। উপরে সারি সারি তিনটি রিং ও নিচে দুইটি এবং প্রত্যেকটি রিং আলাদা আলাদা রঙের। পৃথিবীতে যত লোগো প্রচলিত আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় লোগো হলো অলিম্পিকের লোগো। নীল, কালো, লাল, হলুদ এবং সবুজ এই পাঁচটি রঙের রিংগুলি। রিংগুলির রং নির্বাচন এমনি এমনি করা হয়নি, ওই পাঁচটি রং বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মানব সভ্যতার বুকে প্রায় তিন হাজার বছরের অলিম্পিক গেমের ইতিহাস যেমন বর্ণময় তেমনি অলিম্পিকের লোগো সৃষ্টির পিছনেও রয়েছে একটি ক্ষুদ্র ইতিহাস ও পাঁচটি রঙের অন্তর্নিহিত অর্থ। এই লোগোর স্রষ্টা থেকে শুরু করে কোন রঙের কী অর্থ সে নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।
ঐতিহাসিক সাক্ষ্য – প্রমাণের ভিত্তিতে ৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম অলিম্পিক গেমের আয়োজন করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু আধুনিক অলিম্পিকের শুরু ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসের অ্যাথেন্সে। আর আধুনিক অলিম্পিক আয়োজনের মূল কাণ্ডারী ছিলেন ফরাসি ইতিহাসবিদ Pierre de Coubertin, তাই তাঁকে আধুনিক অলিম্পিকের জনক বলা হয়। অলিম্পিকের পুরো ইতিহাস জানতে নিচের প্রতিবেদনটি পড়ুন।
আরও পড়ুন- Olympic Games History: অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস ও তার ৩ হাজার বছরের জীবনচক্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
লোগো তৈরি
কুবার্টিন সাহেবই ১৯১৩ সালে অলিম্পিকের লোগোর নকশাটি তৈরি করেন। তারপর ১৯১৪ সালে প্যারিসের অলিম্পিক কংগ্রেসে তিনি সেটি পেশ করেন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC) কুবার্টিনের লোগো মঞ্জুর করে, এরপর থেকেই অফিসিয়ালি পাঁচ রিংওয়ালা নকশাটির ব্যবহার শুরু হয়। প্রসঙ্গত, কুবার্টিনই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি গঠন করেছিলেন। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯১৬ সালে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়নি। যেটি হওয়ার কথা ছিল জার্মানির বার্লিন শহরে। ১৯২০ সালের অলিম্পিক গেমের আসর বসে বেলজিয়ামের Antwerp শহরে। সেখানেই প্রথমবার পাঁচ রিংয়ের ছাপ লাগানো অলিম্পিকের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেই প্রথা আজ একশো বছর পরেও সমানে চলছে।
পাঁচ রং অর্থ
অলিম্পিকের লোগোয় ব্যবহৃত পাঁচটি রং পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশকে নির্দেশিত করে। নীল ইউরোপ মহাদেশ, কালো আফ্রিকা মহাদেশ, লাল আমেরিকা মহাদেশ, হলুদ এশিয়া মহাদেশ এবং সবুজ ওশিয়ানিয়া (Oceania: অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড etc) মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। রিংগুলি একসঙ্গে যুক্ত থাকার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবি। আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন আমাদের সবার মধ্যে একাত্মবোধের ভাবনাকে প্রজ্জ্বলিত করতে রিংগুলি পরস্পর আবদ্ধ রাখা হয়েছে।
শেষ কথা
মানুষের মধ্যে সমস্ত ভেদাভেদ-দ্বন্দ্বকে মুছে ফেলে ভাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলা সম্ভব খেলার মধ্য দিয়ে। একটু ইতিহাস ঘাটলেই সহজে এর দৃষ্টান্ত মেলে। প্রাচীনকালে গ্রিস সাম্রাজ্যে যখন প্রথম অলিম্পিক খেলা চালু হয় তখন গ্রিসে বহু শাসকের মধ্যে লাগাতার যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতো। কিন্তু খেলাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হয়। এমনকি সেই সময় খেলোয়াড়রা শত্রু রাষ্ট্রের উপর দিয়েও অবাধে চলাফেরা করতে পারতো। এই ঐক্য স্থাপন কেবলমাত্র খেলার মধ্যে দিয়েই সম্ভব। আবার ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতা সর্বজনবিদিত। অতীতে অনেকবার দেখা গিয়েছে দুই দেশের মধ্যে যখন ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হতো তখন পরস্পরের প্রতি হিংসা অনেকটাই প্রশমিত হতো এবং দুই দেশের নাগরিকরা পরস্পর কাছাকাছি আসতেন। এটাই খেলার জাদু। সেই অর্থে অলিম্পিকের লোগোটি মানব সভ্যতার ঐক্যকে অটুট রাখতে একদম যথার্থ।
আরও পড়ুন- UGC, NET, JRF, NTA এই সব কী ? NET এবং JRF কী আলাদা পরীক্ষা ?