মাধ্যমিকে অসাধারণ রেজাল্ট কে না করতে চায়, সবাই চায়। ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড পরিশ্রম এবং চেষ্টা করে মাধ্যমিকে দুর্দান্ত সাফল্য পেতে। আমরা ‘জীবনযুদ্ধ টিম’ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক প্রস্তুতির সেই পরিশ্রমকে কিছুটা লাঘব করতে কিঞ্চিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখানে বাংলা বিষয়ের সমস্ত পাঠক্রমের প্রশ্ন-উত্তর খুবই উচ্চ মান বজায় রেখে প্রকাশ করছি। ধাপে ধাপে সমস্ত সিলেবাসের বিষয়ই আমরা প্রকাশ করবো। আশা করি আমাদের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ পড়ে অসাধারণ সাফল্য মিলবে।
বাংলা বিষয়ের উত্তর কীভাবে লিখলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যায় তারই কিছু টিপস্ দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণ করো দারুণ উপকৃত হবে।সব সময় কোনো উত্তর লেখার শুরুতেই কোন কবির বা লেখকের কোন কবিতা বা গল্প থেকে প্রশ্নটি এসেছে তা অবশ্যই লিখতে হবে। আমাদের উত্তরগুলোতে সব সময় প্রথমের ওই অংশটি নেই কিন্তু তোমাদের সেটা প্রত্যেক উত্তরেই লিখতে হবে, মনে রেখো।
উত্তরগুলোতে মাঝে মাঝে বাঁকা হরফে কিছু বাক্য দেওয়া আছে। এর অর্থ হলো ওই বাঁকা বাক্যগুলো যে কোনো উত্তরেই ব্যবহার করা যাবে। ওই বাঁকা বাক্যগুলো হলো অলঙ্কারের মতো, উত্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এমন বাক্যগুলি অনেকটাই বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে।
আর, উত্তরের মধ্যে গল্প বা কবিতায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন পঙ্ক্তি/বাক্য ইনভার্টেড কমার ( ‘__’ ) মধ্যে দিতে হবে। এটাও খুব জরুরি।
আমাদের সঙ্গে থাকো ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয়ের উত্তর প্রকাশ করা হবে।

৯ প্রশ্নঃ “কাঁপিল লঙ্কা, কাঁপিল জলধি !” কেন ?
উত্তরঃ প্রমোদকাননে থাকাকালীন ধাত্রী মায়ের কাছে লঙ্কার ঘোর সংকটের কথা জানতে পেরে রাক্ষস বীরেন্দকেশরী মেঘনাদ সত্বর পিতার কাছে ফিরতে রথে আরোহণ করেন। তাঁর রথ সোনারপাখা বিস্তার করে মৈনাক পর্বতের মতো আকাশকে উজ্জ্বল করে এগিয়ে চলে। তাঁর ধনুকের ছিলার টানের টঙ্কার ধ্বনিতে পক্ষীন্দ্রের মতো আকাশে-বাতাসে শব্দনাদ সৃষ্টি হয়। বীরশ্রেষ্ঠের আয়ুধের এই ‘হুঙ্কা’রেই জল-স্থল কেঁপে উঠে। অসীম বলীয়ান মেঘনাদের শৌর্য-বীর্যের পরিচয় উক্ত পঙ্ক্তিটিতে পাওয়া যায়।
- শব্দনাদ- খুব শব্দ।
- আয়ুধ- যুদ্ধের অস্ত্র। এখানে ধনুকের কথা বলা হয়েছে।
- মেঘনাদের শৌর্য-বীর্য- মেঘনাদের বীরত্ব, সাহস ইত্যাদি।
১০ প্রশ্নঃ “হেন কালে তথা, দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী।“ হেন কালে বলতে কোন কালের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ পুত্র হত্যার প্রতিশোধ নিতে এবং রাক্ষসকুলকে রক্ষা করতে রাক্ষসাধিপতি রাবণ রামের সঙ্গে মহাসংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। চারদিকের আকশ-বাতাস রণ-বাদ্য যন্ত্রের আওয়াজে মুখরিত। গর্জন করে উঠছে গজ, উঠছে ঘোড়ার হ্রেষা ধ্বনি, হুঙ্কার করছে পদাতিক সৈন্যবাহিনী। রেশমের রাজপতাকা হাওয়ায় দুলছে স্বর্ণলঙ্কার অস্তিত্বের প্রতীক হয়ে। এই সৈন্য সমাবেশে আকাশ যেন স্বর্ণআভায় ভরে উঠেছে। ঠিক এই সময় লঙ্কেশ্বর রাবণের সমীপে রাক্ষসকুল বীরেন্দ্রকেশরী মেঘনাদ উপস্থিত হন।
- আওয়াজে মুখরিত- আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
- স্বর্ণলঙ্কার অস্তিত্বের প্রতীক হয়ে- স্বর্ণলঙ্কাইয় রাবণের রাজত্ব বজায় রয়েছে, সেটাই ওই পতাকার দ্বারা বোঝানো হয়েছে। যখন কোনও শাসক বা রাজা পরাজিত বা মারা যান তখন তার পতাকা আর উড়ানো হয় না।
- সৈন্য সমাবেশে- সৈন্যদল একত্রিত হয়ে আছে।
- স্বর্ণআভায়- সোনালি রঙের আলোয় আকাশ ভরে উঠেছে।
- সমীপে- সামনে হাজির হলেন।
১১ প্রশ্নঃ “এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি ! কিন্তু অনুমতি দেহ;” বক্তা কে ? কিসের
মায়া ? অনুমতিই বা কিসের ?
উত্তরঃ এক মহাসমরে রাক্ষসাধিপতি রাবণের বীরশ্রেষ্ঠ পুত্র মেঘনাদ রামকে পরাজিত এবং নিহত করেন। কিন্তু দৈববলে শ্রীরাম আবার বেঁচে উঠেন। এরপর আর একটি যুদ্ধে তিনি মেঘনাদের অনুজ বীরবাহুকে যুদ্ধে পরাস্ত করে নিহত করেন। রামের এই পুনর্জীবন লাভ, এটাকেই মেঘনাদ ‘মায়া’ বলেছেন।
তাই মেঘনাদ রামকে পুনরায় হত্যা করার জন্য পিতার কাছে অনুমতি চেয়েছেন। তিনি ভ্রাতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে উদগ্রীব হয়ে উঠেন, তাঁর কথায়, “শরানলে করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে;” নতুবা পিতার চরণে রামকে বেঁধে আনার অঙ্গীকার করেন।
- দৈববল (দেবতার শক্তি) – দেবতার বলে বা মায়ায় বা মন্ত্রে।
- অনুজ- ছোট ভাই।
- উদগ্রীব- ব্যাকুল হওয়া।
১২ প্রশ্নঃ “নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা বারম্বার।“ কাকে, কোথায়, কার কেন
পাঠাতে ‘প্রাণ’ চায় না ?
উত্তরঃ স্বর্ণলঙ্কাধিপতি রাবণ যত বড়ো বীর যোদ্ধাই হোন না কেন কিংবা বিরাট গৌরবময় সাম্রাজ্ঞের অধিপতি, দিনের শেষে তিনিও একজন স্বামী এবং সন্তানের পিতা। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা-মায়া এবং সন্তান বাৎসল্য একজন সম্রাটকেও মাটির কাছাকাছি মানুষে পরিণত করে। সম্প্রতি এক পুত্রকে লঙ্কাপতি হারিয়েছেন, সেই সন্তান বিযোগের বেদনা এখনও বুকে দাউদাউ করে জ্বলছে। তারমধ্যে আবার যুদ্ধ, আবার পুত্র হারানোর ভয়; মহাবীর যোদ্ধা হয়েও রাবণের পিতৃসত্তা যেন কুণ্ঠিত হয়ে উঠে। তাই তিনি আবার সন্তান হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা পেতে চান না।“ নাহি চাহে প্রাণ মম” এই করুণ আর্তি যেন গোটা বিশ্বব্রক্ষ্মাণ্ডের সকল পিতার কণ্ঠস্বর।
- সন্তান বাৎসল্য- সন্তানের জন্য গভীর ভালোবাসা।
- মাটির কাছাকাছি মানুষে পরিণত করে- একজন সম্রাটও যে সাধারণ মানুষ এবং তারও যে মন আছে, ছেলেমেয়েদের জন্য মায়া-মমতা-ভালোবাসা আছে, একদম সাধারণ মানুষের মতোই, সেটাকেই মাটির কাছাকাছি থাকা বলে।
- সন্তান বিযোগের বেদনা এখনও বুকে দাউদাউ করে জ্বলছে- সন্তান হারানোর দুঃখ বুকের মধ্যে ব্যথা দিচ্ছে।
- দুঃসহ ব্যথা- সহ্য করা যায় না এমন ব্যথা।
- পিতৃসত্তা- পিতার মন বা পিতার অনুভূতি।
- কুণ্ঠিত হওয়া- মন চায় না। সঙ্কুচিত হওয়া।
- পিতৃসত্তা যেন কুণ্ঠিত হয়ে উঠে- রাজা হিসাবে নয়, একজন বাবা হিসাবে, বাবার মন ছেলের জন্য কেঁদে উঠে। তাকে যুদ্ধে পাঠাতে মন চায় না।
আরও পড়- অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর, পাবলো নেরুদা: Asukhi Ekjon Question Answer
১৩ প্রশ্নঃ “কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি, রাজেন্দ্র ?” প্রসঙ্গ।
উত্তরঃ স্বর্ণলঙ্কাধিপতি রাবণ যত বড়ো বীর যোদ্ধাই হোন না কেন কিংবা বিরাট গৌরবময় সাম্রাজ্ঞের অধিপতি, দিনের শেষে তিনিও একজন স্বামী এবং সন্তানের পিতা। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা-মায়া এবং সন্তান বাৎসল্য একজন সম্রাটকেও মাটির কাছাকাছি মানুষে পরিণত করে। সম্প্রতি এক পুত্রকে লঙ্কাপতি হারিয়েছেন, সেই সন্তান বিযোগের বেদনা এখনও বুকে দাউদাউ করে জ্বলছে। তারমধ্যে আবার যুদ্ধ, আবার পুত্র হারানোর ভয়; মহাবীর যোদ্ধা হয়েও রাবণের পিতৃসত্তা যেন কুণ্ঠিত হয়ে উঠে। একজন পিতা তাই বলে উঠেন, “এ কাল সমরে, নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা বারম্বার।“ আসলে তিনি আবার সন্তান হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা পেতে চান না। রাবণ বীর যোদ্ধা, মোটেও তিনি কাউকে ভয় পান না। কিন্তু তাঁর হৃদয়েও তো একজন পিতা বাস করে; পিতা হিসাবে তাই পুত্র মেঘনাদকে বার বার যুদ্ধে পাঠাতে মন সায় দেয় না। পিতৃ হৃদয়ের এই দুর্বলতা মেঘনাদ বুঝতে না পেরে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন। “নাহি চাহে প্রাণ মম” এই করুণ আর্তি যেন গোটা বিশ্বব্রক্ষ্মাণ্ডের সকল পিতার কণ্ঠস্বর।
১৪ প্রশ্নঃ “এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে” কোন কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে ? কিসের কলঙ্ক ?
উত্তরঃ “এ কাল সমরে, নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা বারম্বার“ পিতার মুখে এই কথা শোনে মেঘনাদের মনে হয়েছিল, হয়তো বা লঙ্কাধিপতি পুত্রশোকে বিহ্বল হয়ে কিছুটা ভীত। তাই তিনি মেঘনাদকে যুদ্ধে পাঠাতে সংকোচবোধ করছেন, তিনি পিতাকে বলেন, “কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি।” এই অবস্থায় রাক্ষসকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হয়ে নিজে রণক্ষেত্রে না গিয়ে পিতাকে যুদ্ধ করতে পাঠানো কাপুরুষতা। একেই বীরেন্দকেশরী মেঘনাদ ‘কলঙ্ক’ বলে অভিহিত করেছেন।
- বিহ্বল- দুঃখে-শোকে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া।
- সংকোচবোধ- মনের ইচ্ছা নেই, মন যেতে দিতে চায়।
- রণক্ষেত্র- যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে যুদ্ধ করা হয়। রণ মানে যুদ্ধ।
- কাপুরুষ- যে ভয় পায়। ভীরু। যার কোন ক্ষমতা নেই।
- অভিহিত- আখ্যায়িত করা। মনে করা।
১৫ প্রশ্নঃ “গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা বজ্রাঘাতে !” প্রসঙ্গ।
উত্তরঃ স্বর্ণলঙ্কাধিপতি রাবণ অনুজ কুম্ভকর্ণের প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন। শ্রীরামের সঙ্গে যুদ্ধ করতে কুম্ভকর্ণকে অকালে নিদ্রা থেকে জাগানো হয়। যুদ্ধে তিনি রামের কাছে পরাস্ত এবং নিহত হন। তার বিশাল দেহ সিন্দু-তীরে ধরাশায়ী হয়েছে। তার মৃতদেহের পতনকে রাবণ বজ্রাঘাতে পর্বতের চূড়া কিংবা বৃক্ষের পতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
গিরিশৃঙ্গ- পর্বতের চূড়া।
১৬ প্রশ্নঃ “এতেক কহিয়া রাজা” কী বললেন ?
উত্তরঃ রাক্ষসকুলের বীরেন্দ্রকেশরী মেঘনাদ অনুজ বীরবাহুর হত্যার প্রতিশোধ এবং নিজ বংশ গৌরবকে রক্ষা করতে রামের সঙ্গে সম্মুখ সমরে নামতে উদগ্রীব। কিন্তু রাক্ষসাধিপতি রাবণ একদিকে যেমন স্বর্ণলঙ্কার অধিশ্বর তেমনি একজন পিতাও। সম্প্রতি তিনি এক পুত্রকে হারিয়েছেন, তাই অন্য পুত্রাকে যুদ্ধে পাঠাতে তার মন সায় দেয় না। কিন্তু বীরশ্রেষ্ঠ মেঘনাদের দৃঢ়প্রত্যইয়ের কাছে পিতাকেও হার মানতে হয়। শেষে পুত্রকে সেনাপতি পদে বরণ করেন এবং ইষ্টদেবের পূজা সেরে নেওয়ার নির্দেশ দেন আর বলেন, “অস্তাচলগামী দিননাথ এবে; প্রভাতে যুঝিও, বৎস, রাঘবের সাথে।“
- গৌরব- সম্মান, মর্যাদা।
- উদগ্রীব- ব্যাকুল। মনের ছটপটানি।
- অধিশ্বর- স্বর্ণলঙ্কার রাজা।
- সম্প্রতি- কিছুদিন আগে।
- দৃঢ়প্রত্যয়- কঠিন জেদ। That is দৃঢ়প্রত্যয়।
- ইষ্টদেব- যে দেবতাকে পূজা করা হয়। মেঘনাদের ইষ্টদেব ছিলেন অগ্নিদেব।
আরও পড়- আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর, দশম শ্রেণির আফ্রিকা কবিতা: Afrika Kobita Question Answer