একাদশ শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এবারেই প্রথম সেমিস্টার ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হবে। ‘বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি’ বইটি সবেমাত্র ছাত্রছাত্রীরা হাতে পেয়েছে। এই গ্রন্থটি পর্ষদের তরফে বিনামূল্য ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়। বইটি এতো দেরি করে প্রকাশের পিছনে দায়ী পর্ষদ নিজেই। এদিকে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রায় ঘনিয়ে এলো। এমতাবস্থায় সঙ্গত কারণে মনে করাই যায় যে, সম্ভবত প্রথম সেমিস্টারের প্রশ্নপত্র কিছুটা সহজ হতে চলেছে বা অন্যভাবে বলতে গেলে হয়তো বা এবারের পরীক্ষায় মূল মূল বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হবে। খুব গভীর বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হবে না। সেটি বিবেচনা করেই গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর উপর ফোকাস রেখে প্রশ্ন-উত্তর পর্বকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে।
১. বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন কোনটি ?
উত্তরঃ চর্যাপদ। পুঁথিটির আসল নাম চর্যাচর্যবিনিশ্চয়। চর্যাপদে ছিল সংস্কৃত টীকাসহ ধর্মাচরণের বিধিনিষেধ বিষয়ক মোট সাড়ে ৪৬টি পদ বা গান এবং বৌদ্ধাচার্য সরোজবজ্র ও কৃষ্ণাচার্য রচিত দোহা।
২. চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন ?
উত্তরঃ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে চর্যাপদের পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। তাঁরই সম্পাদনে ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ‘হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে এটি প্রকাশিত করা হয়।
৩. চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদ সংস্করণ কে আবিষ্কার করেন ?
উত্তরঃ প্রবোধচন্দ্র বাগচী। নেপাল থেকেই আবিষ্কৃত চর্যাপদের এই তিব্বতি অনুবাদ সংস্করণে মোট ৫১টি পদ বা গান ছিল। এ থেকে অনুমান করা হয় চর্যাপদের মূল পুঁথিটি ৫১টি পদে রচিত ছিল।
৪. চর্যাপদ কবে রচিত হয় ?
উত্তরঃ ভাষাচার্য সনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং প্রবোধচন্দ্র বাগচীর মতে চর্যাপদের পদগুলি দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যেই রচিত হয়েছিল।
৫. চর্যাপদের রচয়িতা কারা ?
উত্তরঃ চর্যাপদের মোট ২৪ জন রচয়িতার কথা জানা যায়। সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ পদগুলোর রচনা করেন। রচয়িতার নাম ও পদ সংখ্যা-
- কাহ্নপাদ (কৃষ্ণাচার্য): ১২টি পদ
- ভুসুকুপাদ: ৮টি
- সরহপাদ: ৪টি
- কুক্কুরীপাদ: ৩টি
- লুইপাদ, শান্তিপাদ, সবরপাদ: ২টি করে
- ডোম্বীপাদ, চাটিলপাদ, দ্বারিকপাদ, ধামপাদ: প্রমুখ ১টি করে
৬. চর্যাপদ রচনার উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তরঃ চর্যাপদ বৌদ্ধ ধর্ম সাধনার গূঢ় প্রণালী ও দর্শনতত্ত্ব এবং সেই সঙ্গে সাধনপথের আনন্দকে প্রকাশ করার জন্য এই গানগুলি লেখা হয়েছে। সহজ করে বললে চর্যাগীতগুলো এক ধরনের সাধনসংগীত এবং এক সময় নৃত্য সহকারে গাওয়া হতো। বিভিন্ন রূপকের আশ্রয়ে সাংকেতিক ভাষায় রচিত এই গানগুলি নিঃসন্দেহে ধর্মকেন্দ্রিক কিন্তু পদগুলির সাহিত্য-সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। পদগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে কাব্যরস তেমনি রয়েছে সমকালীন লৌকিক জগতের প্রাণবন্ত ছবি।
- গূঢ়: গুপ্ত
- রূপক: ‘জীবন একটি সংগ্রাম’ এখানে বেঁচে থাকাকে সংগ্রামের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থ প্রকাশের এই বিশেষ আঙ্গিকটিকে রূপক বলা হয়।
৭. চর্যাপদ কোন ছন্দে রচিত ?
উত্তরঃ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা।
৮. চর্যাপদের ভাষাকে কী নামে অভিহিত করা হয় ? বা চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যাভাষা’ বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ হাজার বছরের পুরনো অপরিণত বাংলা ভাষায় চর্যাপদগুলি রচিত। কিন্তু চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যাভাষা’ বলে অভিহিত করা হয়। সন্ধ্যা বলতে আমরা এমন এক সময়কে বুঝি যখন আলোর অস্পষ্টতার কারণে স্পষ্ট করে কিছু দেখা যায় না। সন্ধ্যার স্লান আলোয় কিছুটা স্পষ্ট ও কিছুটা অস্পষ্ট ভাব থাকে। চর্যাপদের ভাষাও এই সন্ধ্যার আলোর মতোই কিছুটা বোঝা যায় আবার কিছুটা বোঝা যায় না। কেমন যেন একটা রহস্যের প্রহেলিকা রয়েছে চর্যাপদের ভাষায়। তাই চর্যার ভাষাকে ‘সন্ধ্যাভাষা’ বলা হয়।
৯. চর্যাপদে কোন শ্রেণির মানুষের জীবনযাপন ফুটে উঠেছে ?
উত্তরঃ প্রান্তিক, অনার্য, সাধারণ মানুষের জীবনছবি চর্যাপদে দেখা যায়। শবর, ডোম, নিষাদ প্রভৃতি সামাজিকভাবে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের নিঃস্ব-নিরানন্দ জীবনগাঁথা চর্যার গানে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
১০. চর্যাপদে তৎকালীন সমাজের কোন কোন চিত্র দেখা যায় ?
উত্তরঃ
- যৌতুক নেওয়ার প্রচলন
- চোর- ডাকাতের উৎপাত
- বিনোদন স্বরূপ যূথবদ্ধ নাচ, গান ও গ্রামীণ উৎসব (যূথবদ্ধ- গোল করে নাচ)
- সামাজিক শ্রেণিভেদ, বর্ণভেদ ও অস্পৃশ্যতা
১১. শবর, ডোম, নিষাদ প্রভৃতি জনজাতির মানুষ চর্যাপদের সময়ে কোথায় বসবাস করতেন ?
উত্তরঃ গ্রামের বাইরে, উঁচু টিলায়।
১২. চর্যাপদগুলোতে কী কী পেশার উল্লেখ রয়েছে ?
উত্তরঃ তুলো ধোনা, দই বানানো, মদ বিক্রি, মাছধরা, নৌকা চালানো, পশুপাখি শিকার, জাদুবিদ্যা, সাপের খেলা দেখানো ইত্যাদি।
আরও পড়- Olympic Games History: অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস ও তার ৩ হাজার বছরের জীবনচক্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
আরও পড়- বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি