৪৯. রেপিত্তি বিযুক্তি রেখা কাকে বলে ?
উত্তরঃ বহিঃগুরুমণ্ডল ও অন্তঃগুরুমণ্ডল যে রেখা দ্বারা পরস্পর বিভক্ত থাকে তাকে রেপিত্তি বিযুক্তি রেখা বলা হয়।
৫০. বহিঃগুরুমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য:
উত্তরঃ
- মোহো ও রেপিত্তি বিযুক্তি রেখার মধ্যবর্তী গুরুমণ্ডলের উপরের অংশটি হল বহিঃগুরুমণ্ডল।
- এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০-৬৭০ কিমি গভীরে বিস্তৃত রয়েছে।
- উষ্ণতা প্রায় ৫০০-৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৫১. ক্রফেসিমা কাকে বলে ?
উত্তরঃ ক্রোমিয়াম (Cro), লোহা (Fe), সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেসিয়াম (Ma) দিয়ে বহিঃগুরুমণ্ডল গঠিত বলে একে ক্রফেসিমা (CroFeSiMa) বলা হয়।
৫২. অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার কী ?
উত্তরঃ ভূত্বক ও বহিঃগুরুমণ্ডলের মাঝে অবস্থিত সান্দ্র প্রকৃতির ম্যাগমা দ্বারা গঠিত নমনীয় ভূস্তরকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বা অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরের অবস্থান ভূপৃষ্ঠের নিচে ১০০ থেকে ২৫০ কিমির মধ্যে। গড় উষ্ণতা ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই স্তরের উপরেই মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক পাতগুলি ভাসমান ও গতিশীল অবস্থায় থাকে।
৫৩. গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা কী ?
উত্তরঃ পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমণ্ডল যে রেখার দ্বারা পরস্পর পৃথক থাকে তাকে গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা বলা হয়। (উইশার্ট গুটেনবার্গ)
৫৪. অন্তঃগুরুমণ্ডল বৈশিষ্ট্য –
উত্তরঃ
- রেপিত্তি বিযুক্তি ও গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখার মধ্যবর্তী ভূস্তর হল অন্তঃগুরুমণ্ডল।
- এই স্তর বহিঃগুরুমণ্ডল অপেক্ষা বেশি কঠিন।
- ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭০ কিমি গভীরে এই স্তর শুরু হয়েছে এবং প্রায় ২৯০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ প্রায় ২২৩০ কিমি পুরু।
- অন্তঃগুরুমণ্ডলের তাপমাত্রা ৯০০ থেকে ৩৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- ভারী স্তর এটি, ঘনত্ব ৪.৫-৫.৫ গ্রাম/ঘন সেমি।
- ভূমিকম্পের প্রাথমিক তরঙ্গের গতিবেগ (P তরঙ্গ) ১৩.৭ কিমি/সেকেন্ড এবং মাধ্যমিক তরঙ্গের (S তরঙ্গ) গতিবেগ ৭.৩ কিমি/সেকেন্ড।
- নিকেল (Ni), লোহা (Fe), সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেসিয়াম (Ma) দিয়ে এই স্তর গঠিত বলে একে নিফেসিমা (NiFeSiMa) বলা হয়।
৫৫. কেন্দ্রমণ্ডল কাকে বলে ?
উত্তরঃ পৃথিবীর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অর্ধতরল ম্যাগমা এবং কঠিন ও ভারী পদার্থ দিয়ে গঠিত যে স্তর রয়েছে তাকে কেন্দ্রমণ্ডল বলে। এই স্তরের বিশেষ পরিচিতি হলো-
- মূলত লোহা ও নিকেল দ্বারা গঠিত।
- ভূপৃষ্ঠের নিচে ২৯০০ কিমি থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত কেন্দ্রমণ্ডল বিস্তৃত। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ৬৩৭১ কিমি ধরা হয়। সেই হিসেবে কেন্দ্রমণ্ডল প্রায় ৩৪৭১ কিমি পুরু (৬৩৭১ – ২৯০০ = ৩৪৭১)।
- এই স্তরের গড় উষ্ণতা ৪০০০-৫০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কেন্দ্রমণ্ডলের দুটি উপস্তর রয়েছে-
- বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল
- অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল
৫৬. লেম্যান বিযুক্তি রেখা কী ?
উত্তরঃ বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল ও অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল যে রেখার দ্বারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকে তাকে লেম্যান বিযুক্তি বলা হয়।
৫৭. বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল –
উত্তরঃ
- ভূপৃষ্ঠের গভীরে ২৯০০ থেকে ৫১৫০ কিমি পর্যন্ত এই স্তরের বিস্তৃতি।
- মূলত লোহা ও নিকেলের সমন্বয়ে তৈরি অর্ধতরল বা সান্দ্র প্রকৃতির পদার্থ দ্বারা গঠিত।
- এই স্তরে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে তৈরি হয়ে পৃথিবীর ভূচৌম্বক ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে।
- গড় উষ্ণতা প্রায় ৪০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- ঘনত্ব ১০-১২ গ্রাম/ঘন সেমি।
- ভূমিকম্পের প্রাথমিক তরঙ্গের (P তরঙ্গ) গতিবেগ বহিঃকেন্দ্রমণ্ডলে হ্রাস পেয়ে ৮-১০ কিমি/সেকেন্ড হয়।
৫৮. অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল –
উত্তরঃ
- ভূপৃষ্ঠের নিচে ৫১৫০ কিমি থেকে ৬৩৭১ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ স্তরটি প্রায় ১২২১ কিমি পুরু।
- পৃথিবীর অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল কঠিন পদার্থ দ্বারা গঠিত। মূলত নিকেল (Ni) ও লোহা (Fe) দিয়ে তৈরি বলে এই স্তর নিফে (NiFe) নামে পরিচিত।
- এই স্তরের উষ্ণতা সর্বাধিক প্রায় ৫০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, ১২-১৩.৬ গ্রাম/ঘন সেমি।
- P তরঙ্গের গতিবেগ ১১ কিমি/সেকেন্ড।
৫৯. P তরঙ্গের গতিবেগ সবচেয়ে বেশি কোন স্তরে ?
উত্তরঃ অন্তঃগুরুমণ্ডলে।
৬০. কোন স্তর দিয়ে মাধ্যমিক তরঙ্গ (S তরঙ্গ) যেতে পারে না ?
উত্তরঃ বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল।
‘বিযুক্তি’ রা কে ও কী ?
1. কনরাড বিযুক্তি: অস্ট্রিয় ভূপদার্থ বিজ্ঞানী ভিক্টর ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫ কিমি গভীরে সিয়াল ও সিমার মাঝে কনরাড নিযুক্তি আবিষ্কার করেন। তারই নামানুসারে নামকরণ করা হয়।
2. মোহো বিযুক্তি: ক্রয়েশীয় ভূমিকম্পবিদ অ্যানড্রিজা মোহোরোভিসিক ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৩ কিমি গভীরে ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের মাঝে এই বিযুক্তি রেখা আবিষ্কার করেন।
3. রেপিত্তি বিযুক্তি: মার্কিন ভূবিজ্ঞানী উইলিয়াম সি রেপিত্তি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৭০ কিমি গভীরে বহিঃগুরুমণ্ডল ও অন্তঃগুরুমণ্ডলের মাঝে এই বিযুক্তির সন্ধান পান।
4. উইশার্ট-গুটেনবার্গ বিযুক্তি: দুই জার্মান ভূবিজ্ঞানী উইশার্ট ও গুটেনবার্গ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৯০০ কিমি গভীরে গুরুমণ্ডল এবং কেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে এই বিযুক্তি রেখাটি দেখতে পান।
5. লেম্যান বিযুক্তি: ডেনমার্কের ভূমিকম্পবিদ ইঙ্গে লেম্যান ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫১৫০ কিমি গভীরে বহিঃ ও অন্তঃ কেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে এই বিযুক্তি রেখা দেখতে পান।
আরও পড়- Big Bang Theory: বিগ ব্যাং তত্ত্ব, পৃথিবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ