জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর: Gyanchakshu class 10 question answer

মাধ্যমিকে অসাধারণ রেজাল্ট কে না করতে চায়, সবাই চায়। ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড পরিশ্রম এবং চেষ্টা করে মাধ্যমিকে দুর্দান্ত সাফল্য পেতে। আমরা ‘জীবনযুদ্ধ টিম’ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক প্রস্তুতির সেই পরিশ্রমকে কিছুটা লাঘব করতে কিঞ্চিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখানে বাংলা বিষয়ের সমস্ত পাঠক্রমের প্রশ্ন-উত্তর খুবই উচ্চ মান বজায় রেখে প্রকাশ করছি। ধাপে ধাপে সমস্ত সিলেবাসের বিষয়ই আমরা প্রকাশ করবো। আশা করি আমাদের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ পড়ে অসাধারণ সাফল্য মিলবে।
বাংলা বিষয়ের উত্তর কীভাবে লিখলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যায় তারই কিছু টিপস্ দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণ করো দারুণ উপকৃত হবে।

সব সময় কোনো উত্তর লেখার শুরুতেই কোন কবির বা লেখকের কোন কবিতা বা গল্প থেকে প্রশ্নটি এসেছে তা অবশ্যই লিখতে হবে। আমাদের উত্তরগুলোতে সব সময় প্রথমের ওই অংশটি নেই কিন্তু তোমাদের সেটা প্রত্যেক উত্তরেই লিখতে হবে, মনে রেখো।
উত্তরগুলোতে মাঝে মাঝে বাঁকা হরফে কিছু বাক্য দেওয়া আছে। এর অর্থ হলো ওই বাঁকা বাক্যগুলো যে কোনো উত্তরেই ব্যবহার করা যাবে। ওই বাঁকা বাক্যগুলো হলো অলঙ্কারের মতো, উত্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এমন বাক্যগুলি অনেকটাই বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে।
আর, উত্তরের মধ্যে গল্প বা কবিতায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন পঙ্‌ক্তি/বাক্য ইনভার্টেড কমার ( ‘__’ ) মধ্যে দিতে হবে। এটাও খুব জরুরি।
আমাদের সঙ্গে থাকো ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয়ের উত্তর প্রকাশ করা হবে।

জ্ঞানচক্ষু
আশাপূর্ণা দেবী
আশাপূর্ণা দেবী (৮ জানুয়ারি ১৯০৯ – ১২ জুলাই ১৯৯৫) একজন সুনামধন্য বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং শিশুসাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর তিনটি উপন্যাস, প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা এবং বকুলকথা বাংলা সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনার মধ্যে পরিগণিত হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপে ভূষিত করা হয়। পাঠ্য গল্পটি ‘কুমকুম’ গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

১ প্রশ্নঃ  “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল।“ প্রসঙ্গ।

উত্তরঃ  আশাপূর্ণা দেবীর “জ্ঞানচক্ষু” গল্প তপনের লেখক হওয়ার স্বপ্ন আগাগোড়াই ছিল। সে কোনওদিন স্বচক্ষে কোনও লেখক দেখেনি তাই সত্যিকারের কোন লেখককে চাক্ষুষ করার বাসনা তার মনের গভীরে ছিলই। এরই মধ্যে ঘটনাচক্রে  তার ছোটোমাসির সঙ্গে যাঁর বিয়ে হয় তিনি একজন লেখক ! শুধু লেখকই নন, তাঁর লেখা বই-এর আকারে ছাপাও হয় ! ‘সত্যিকার লেখক’ এভাবে পরমাত্মীয় রূপে ধরা দিল ! এই ‘অপ্রত্যাশিত’ এবং ‘বিস্ময়কর’ খবর শোনে তপনের অন্তরে মিশ্র আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে, তারই বহ্নিঃপ্রকাশ ‘চোখ মার্বেল’ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ঘটেছে।

  • চাক্ষুষ করা- নিজের চোখে দেখা।
  • পরমাত্মীয় =পরম + আত্মীয়। খুব কাছের আত্মীয়।
  • অন্তরে মিশ্র আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে- মনের মধ্যে আনন্দ-খুশি-অবাক ইত্যাদি
  • নানা আবেগের মিশ্রন দেখা যায়। অর্থাৎ অনেকগুলো আবেগের মিক্স ( Mix )

২ প্রশ্নঃ  “এবিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের।“  কোন বিষয় ?

উত্তরঃ লেখকরাও  যে রক্ত-মাংসে গড়া একজন অতিসাধারণ মানুষ এবং তপনের বাবা, ছোটোমামা কিংবা মেজোকাকুর মতোই অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ এই বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল। তার ধারণা ছিল লেখকরা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নয়। লেখকদের সে অতিমানব মনে করেছিল। ছোটো বেলায় আমরা কীভাবে নানা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হই তাই তপন চরিত্রটির  মধ্য দিয়ে লেখিকা আমাদের দেখিয়েছেন।

  • অতিমানব- সাধারণ মানুষের থেকে খুবই উন্নত ধরনের মানুষ।

৩ প্রশ্নঃ   “কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের।“  ‘জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল মানে কী ? কীভাবে জ্ঞানচক্ষু খুলল ?

উত্তরঃ  লেখকরাও  যে রক্ত-মাংসে গড়া একজন অতিসাধারণ মানুষ এবং তপনের বাবা, ছোটোমামা কিংবা মেজোকাকুর মতোই অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ এই বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল। তার ধারণা ছিল লেখকরা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নয়। লেখকদের সে অতিমানব মনে করেছিল।

কিন্তু যখন সে দেখল লেখক মেসোও তার বাবা-কাকুর মতোই দাড়ি কামান, সিগারেট খান বা খেতে বসে জোর করে কিছু দিতে চাইলে, “আরে ব্যাস, এত কখনো খাওয়া যায় ?” বলে উঠেন। এছাড়াও দৈনন্দিন নানা কাজ যেমন, স্নানের সময় স্নান কিংবা ঘুমানোর সময় ঘুমোন ইত্যাদি কাজও তিনি অন্যান্য সাধারণ লোকের মতোই করেন। আর পাঁচজনের মতো তিনিও গল্প করেন, তর্ক করেন, “এ দেশের কিছু হবে না“ বলে নিজের হতাশা প্রকাশ করেন। এমনকি তিনিও সিনেমা দেখেন, সেজেগুজে বেড়াতে যান। খুব কাছ থেকে ‘লেখক মেসো’র এই সব আচার-আচরণ দেখে লেখক সম্পর্কে তপনের যে ভুল ধারণা এতদিন ছিল তা ক্রমশ ভেঙে যায়। তপনের এই আত্মোপলব্ধিকেই লেখিকা ‘জ্ঞানচক্ষু’ খুলে গেল’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এখান থেকে আরও যে সমস্ত উত্তর লেখা যাবে

“এ দেশের কিছু হবে না”

          “ ‘লেখক’ মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয়,”

                     “তবে তপনেরই বা লেখক হতে বাধা কী ?”

*** উপরোক্ত সব প্রশ্নের উত্তর এই উত্তর থেকেই লেখা সম্ভব। শুধু শেষে প্রশ্নের সঙ্গে মানানসই একটা বাক্য জুড়ে দিলেই হয়ে গেল।

প্রশ্নঃ  “তপন অবশ্য মাসির এই হইচইতে মনে মনে পুলকিত হয়“  কেন ?

উত্তরঃ  তপনের লেখা গল্প হাতে নিয়ে ছোটোমাসি ছোটেন লেখক মেসোকে দেখাতে। তপন মুখে আঁ আঁ…না আ আ… করে মেকি চালে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও মাসি জোর করে সেই গল্প মেসোকে দেখাতে নিয়ে যান। তপন আপাতভাবে মাসিকে বাধা দিতে চাইলেও সে মনে মনে চায় যে লেখক মেসো তার লেখা পড়ুক। কারণ একজন লেখকই আর একজনের লেখার সঠিক মূল্য বিচার করতে পারবে। মেসো যেহেতু একজন লেখক তাই তিনি তপনের লেখার গুণগত মান ভালো করে যাচাই করতে পারবেন। এছাড়াও সব প্রতিভাবান ব্যক্তিই চান যে তার প্রতিভার কথা সকলে জানুক এবং মানুন। তেমনি তপনও মনে মনে চায় তার লেখক সত্তাকে সকলে জানুক এবং তাকে লেখক হিসাবে মান্য করুক। আর মাসি তার লেখা বাড়ির সকলকে দেখালে সবাই তপনের লেখার ব্যাপারে জানতে পারবে। স্রষ্টা হিসাবে তপন নিজেকে কখনই ছোটো মনে করে না। তাই তার গল্প নিয়ে মাসির এই উৎসাহ তাকে মনে মনে ‘পুলকিত’ করে।  

  • মেকি চালে- মিথ্যা ঢং দেখানো। ( মেকি- নকল )

প্রশ্নঃ   “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই“   তাৎপর্য

উত্তরঃ  জহুরি রত্ন নিয়ে কারবার করেন। তাই তিনি আসল-নকল রত্ন বা রত্নের ভালো-মন্দ ভালোই বোঝেন। রত্ন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞাতা রত্নের মূল্য নির্ধারণে তাকে যোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত করে। কোনও রত্ন হাতে নিয়েই তিনি তার মূল্য নির্ধারণে সক্ষম হন। তেমনি যিনি সত্যিকারের লেখক তিনি অন্যকারও  কোন লেখার সঠিক মান বিচার করতে পারদর্শী হন। গল্পে দেখা যায় তপনের  ছোটোমেসো একজন লেখক। আর তাই তিনি তপনের লেখা গল্পের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন। এই প্রসঙ্গেই উক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।

প্রশ্নঃ    “তপন, তোমার গল্প তো দিব্যি হয়েছে

                                        বা

                              “তখন আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়

                                                            বা

                                        “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা“       প্রসঙ্গ

উত্তরঃ  ছোটোমাসির দৌলতে লেখক মেসোর হাতে পৌঁছে যায় তপনের কাঁচা লেখা। সেই লেখা পড়ে হয়তো বা নতুন শ্বশুরবাড়ির ছোট্ট ছেলেটিকে খুশি করতেই মেসো বলে উঠেন, “তপন, তোমার গল্প তো দিব্যি হয়েছে।“ মেসোর এই প্রশংসাকে তপন প্রথমে ঠাট্টা ভেবেছিল। কিন্তু মেসোর মুখে করুণার ছাপ দেখে সে আবেগ তাড়িত হয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। শুধু প্রশংসাই নয় একটু- আধটু ‘কারেকশান’ করলে যে সেই লেখা ছাপাতেও দেওয়া চলে সেই কথাও মেসো বলেন। এই সুযোগে তপনের গল্প ছাপিয়ে দেওয়াটাই যে নতুন “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে” সেই কথা পেরে বসেন ছোটোমাসি।

  • সেই কথা পেরে বসেন- সেই কথা বলে বসেন।

আরও পড়- আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর, প্রথমভাগ

প্রশ্নঃ    “বিকেলে চায়ের টেবিলে উঠে কথাটা“     প্রসঙ্গ

উত্তরঃ   তপন একটি গল্প লিখেছে আর ছোটোমাসি সেই গল্প নতুন ‘লেখক’ মেসোকে দেখিয়েছেনও। সেই গল্প পড়ে ‘লেখক’ মেসো “তোমার গল্প তো দিব্যি হয়েছে“ বলে প্রশংসাও করেছেন। লেখাটা একটু-আধটু ‘কারেকশান’ করে বিখ্যাত ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তিনি ছাপিয়ে দিবেন সেই আশ্বাসও দেন। তপনের এই লেখালেখির বিষয়টাই বিকেলে চায়ের টেবিলে পারিবারিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। সেই প্রসঙ্গেই উক্ত মন্তব্যটি করা হয়।

  • পারিবারিক আলোচনার- পরিবারের সকলে মিলে যে আলোচনা।
  • কেন্দ্রবিন্দু- আলোচনার আসল বিষয়।

প্রশ্নঃ       “তপন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়“       প্রসঙ্গ

উত্তরঃ   তপনের গল্প লেখার বিষয়টাই বিকেলে চায়ের টেবিলে পারিবারিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। তপনের কাঁচা হাতের লেখা গল্প শুনে সকলে হাসেন। কিন্তু ‘লেখক’ মেসো, “না- না আমি বলছি – তপনের হাত আছে“ বলে তপনকে আশ্বস্ত করেন। এমনকি তপন যে এই কম বয়সে রাজারানি, খুন-জখম-দুর্ঘটনা ইত্যাদি ছোটবেলাকার কাল্পনিক বিষয়কে অবলম্বন করে কোন গল্প না লিখে তার স্কুলে ভরতি হওয়ার দিনটির অভিজ্ঞাতা নিয়ে গল্প লিখেছে তা নিয়ে তিনি দরাজ প্রশংসা করেন। একজন সত্যিকারের লেখকের কাছে  এমন মুক্ত কণ্ঠে প্রশংসা সূচক কথা শুনে তপন গর্ব মিশ্রিত আবেগে ‘বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়।‘

  • আশ্বস্ত করা- ভরসা দেওয়া।
  • দরাজ প্রশংসা- মুক্ত মনে প্রশংসা করা।

প্রশ্নঃ   “এই কথাটাই ভাবছে তপন রাতদিন“  প্রসঙ্গ

উত্তরঃ  ‘লেখক’ মেসো তপনের লেখা গল্প সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। যাবার বেলায় সেই গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপিয়ে দিবেন এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়ে যান।

তপন যে লেখালেখি করে এবং রীতিমতো আস্ত একটা গল্পও লিখে ফেলেছে এ কথা বাড়ির সকলে ছোটোমাসি এবং মেসোর দৌলতে জানতে পারে। এমনকি এ নিয়ে ‘চায়ের টেবিলে’ আলোচনাও হয়। মেসো কি সত্যিই তার গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’য় ছাপাবে ? হাজার হাজার মানুষ কি সেই গল্প পড়বে ? সে কি লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাবে ? ইত্যাদি নানা মনের খেয়াল তার অন্তরে ঘুরপাক  খেতে থাকে। বাড়িতে সে যে লেখক হিসাবে ‘সুনাম’ অর্জন করেছে সেও এক উত্তেজনা ! তপনের শিশু মনে তার ক্ষুদ্র সৃষ্টিকে নিয়েই যে ভাবনা ঘোরাফেরা করে সেই প্রসঙ্গেই  উক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।

১০ প্রশ্নঃ   “গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের,”   প্রসঙ্গ

উত্তরঃ  আশাপূর্ণা দেবীর “জ্ঞানচক্ষু” গল্পে উক্ত বাক্যটির মধ্যে স্রষ্টার নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে তীব্র ভাবাবেগ প্রকাশ পেয়েছে।

নতুন লেখক মেসোকে দেখে, লেখক সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা কেটে যায় তপনের। সে বুঝতে পারে সাধারণ মানুষরাই লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। এটা জেনে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তারপরই  এক দুপুরবেলা সবাই যখন নিশ্চুপ সেই সময় সে খাতা-কলম নিয়ে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে যায় এবং একাসনে বসে একটা গোটা গল্প লিখেও ফেলে। নিজের লেখা গল্প যখন সে পড়ল তখন সৃষ্টির আনন্দ-আবেগে তার শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। এর মধ্য দিয়ে অন্তরের তীব্র ভাবাবেগ প্রকাশ পেয়েছে।

  • ভাবাবেগ- মনের আবেগ।

১১ প্রশ্নঃ    “বুকের রক্ত ছলকে উঠে তপনের।“     কেন ?

উত্তরঃ   তপনের ছোট মেসো একজন লেখক। তিনি তপনের লেখা গল্প একটু-আধটু ‘কারেকশান’ করে “সন্ধ্যাতারা” পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গল্পটি নিয়ে যান। তারপর অনেকদিন পেরিয়ে যায়, স্কুলের ছুটিও শেষ হয়ে আবার পড়াশোনা শুরু হয়ে যায়। এদিকে মেসো যখন থেকে গল্পটি নিয়ে গেছে তখন থেকে তপন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে, কবে গল্পটি সত্যি সত্যি ছাপানো হবে সেই অপেক্ষায়। তার যেন আর ধৈর্যের বাঁধ মানে না, চঞ্চল হয়ে উঠে সে অপেক্ষার দিন গুনতে গুনতে। এক প্রকার সে প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছিল। এর মধ্যেই ঘটল সেই ঘটনা। ছোটমাসি ও মেসো “সন্ধ্যাতারা” পত্রিকা হাতে তপনের বাড়িতে বেড়াতে এলেন। পত্রিকাটি দেখেই তার মনের মধ্যে থাকা সুপ্ত বাসনাটির বাস্তবায়নের সম্ভাবনা উঁকি দিলস্বপ্ন পূরণের আশ্বাসে এক অনাবিল রোমাঞ্চে তার বুকের রক্ত ছলকে ওঠে

  • সুপ্ত বাসনা- মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছা।
  • বাস্তবায়নের সম্ভাবনা উঁকি দিল- গল্পটি সত্যি ছাপানো হয়েছে বলে মনে হওয়া।
  • স্বপ্ন পূরণের আশ্বাসে এক অনাবিল রোমাঞ্চে তার বুকের রক্ত ছলকে ওঠে- লেখাটা ছাপা হলে তপনের স্বপ্ন পূরণ হবে, পত্রিকাটি দেখা তার মনে হয়েছিল হয়তো বা লেখাটা ছাপা হয়েছে, সেই আশায় সে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে।
  • অনাবিল- খাঁটি, বিশুদ্ধ, Pure

১২ প্রশ্নঃ    “তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন। “   কোন দিন ? কিসের দুঃখ ?

উত্তরঃ   ছোট্ট তপন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সে তার কল্পনাকে সঙ্গী করে লিখেও ফেলে আস্ত একটা গল্প। ছোটমাসির সঙ্গে নতুন বিয়ে হওয়া লেখক মেসো সেই গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যান। অনেক অপেক্ষার প্রহর কেটে যাওয়ার পর গল্পটি ছাপাও হয়। কিন্তু মেসোর ‘কারেকশান’ এর ঠেলায় তপনের কাঁচা লেখা তার কচি সুভাস হারিয়ে ফেলে। মেসোর পরিণত কলমের খোঁচায় নতুন রূপ ধারণ করে। তপন যখন পরিবারের সকলের সামনে তার ছাপানো গল্প পড়তে যায় তখন সে তার নিজের লেখা গল্পকেই চিনতে পারে না ! গল্পটি আগাগোড়া ‘কারেকশান’ করা হয়েছে।  নিজের লেখায় নিজেকেই খুঁজে না পেয়ে স্রষ্টা হিসাবে তপন ভীষণ কষ্ট পায়। অন্যের কৃতকর্মের মিথ্যা বাহবা পাওয়ার মতো দুঃখ এই জগতে আর নেই। গল্প ছাপানোর আনন্দের পরিবর্তে সেই দিনটিকে তাই ‘সবচেয়ে দুঃখের দিন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।   

  • কচি সুভাস হারিয়ে ফেলে- ছোট তপনের লেখার মধ্যে একটা কাঁচা কাঁচা ভাব আছে। তাই কচি সুভাস আছে বলা হয়েছে। (সুভাস- গন্ধ )
  • মেসোর পরিণত কলমের খোঁচায়- মেসোর পাকা হাতে লেখাটা ভালো হয়ে উঠে।
  • অন্যের কৃতকর্মের মিথ্যা বাহবা পাওয়ার মতো দুঃখ এই জগতে আর নেই- মেসো গল্পটা নতুন করে লিখেছে এবং ছাপিয়ে দিয়েছে। সবাই সেটা জানে। কিন্তু তপনের কাছে সবাই  প্রশংসা করার অভিনয় করছে। মেসোই গল্পটা লিখেছে অথচ তপনের নাম দেওয়া, এটাই তার দুঃখের কারণ।     

আরও পড়- আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি প্রশ্ন উত্তর

সবার সঙ্গে শেয়ার করুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a comment