৩৬. ভূমিকম্প ছায়াবলয় সৃষ্টির কারণ কী ?
উত্তরঃ
- প্রাথমিক তরঙ্গের প্রতিসরণ এবং
- মাধ্যমিক তরঙ্গ তরল পদার্থের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না
ব্যাখ্যাঃ
আমরা জানি তরঙ্গ যখন লঘু মাধ্যম থেকে কঠিন মাধ্যমে বা কঠিন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে যায় (তরল থেকে কঠিন এর দিকে বা কঠিন থেকে তরল পদার্থের দিকে) তখন গতিপথ পরিবর্তিত হয়। তাই ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক তরঙ্গ পৃথিবীর কেন্দ্রের ভেতর দিয়ে সোজাসুজি যেতে পারে না, কিছুটা বেঁকে চলে। সেজন্য ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে তার ঠিক উল্টো দিকের স্থানে অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রি স্থানে প্রাথমিক তরঙ্গ পৌঁছাতে পারে না। কেননা পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল তরল-গলিত ম্যাগমা এবং কঠিন পদার্থ দিয়ে গঠিত। অপরদিকে মাধ্যমিক তরঙ্গ তো তরল ম্যাগমা দিয়ে যেতেই পারে না।
৩৭. প্রতিপাদ স্থান কাকে বলে ?
উত্তরঃ একটি স্থানের ঠিক বিপরীত দিকে যে স্থান অবস্থান করে তাকে প্রতিপাদ স্থান বলে। ভালো করে বলা যাক, আমি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার পায়ের তলায় একদম সোজাসুজি সুরঙ্গ খুঁড়ে আমি যদি পৃথিবীর অপর প্রান্তে পৌঁছে যাই, তবে যে স্থানে গিয়ে প্রকট হবো সেই স্থানটিই হল মাউন্ট এভারেস্ট চূড়ার প্রতিপাদ স্থান। অর্থাৎ একটি স্থানের প্রতিপাদ স্থান ঠিক ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে অবস্থান করে এবং সময়ের পার্থক্য হয় ১২ ঘণ্টার।
৩৮. পৃথিবীর গঠনগত স্তর এবং উপস্তরগুলি হল-
উত্তরঃ:
- ভূত্বক
- বহিঃগুরুমণ্ডল
- অন্তঃগুরুমণ্ডল
- বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল এবং
- অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল
৩৯. ভূত্বক (Crust) কাকে বলে ?
উত্তরঃ
- পৃথিবীর সবচেয়ে বাইরের যে স্তরে আমরা বসবাস করি, সেটিই হচ্ছে ভূত্বক।
- ভূত্বক নরম ও কঠিন শিলা এবং মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত। তাই একে শিলামণ্ডল বলা হয়।
- সমুদ্র তলদেশে ৬-১০ কিমি এবং পার্বত্য অঞ্চলে ১০-৭০ কিমি গভীরতা পর্যন্ত ভূত্বক বিস্তৃত।
- ভূত্বকের শিলামণ্ডল মূলত সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এই তিনটি উপাদান দিয়ে গঠিত।
- ভূত্বকের ঘনত্ব ২.৭-২.৯ গ্রাম/ঘন সেমি
- পৃথিবীর স্তরগুলির মধ্যে ভূত্বক সবচেয়ে শীতল।
- ভূত্বকের নিচের স্তর হল গুরুমণ্ডল।
৪০. মোহো বিযুক্তি রেখা কী ?
উত্তরঃ ভূত্বক এবং গুরুমণ্ডল, এই দুই স্তর মোহো বিযুক্তি দ্বারা বিভক্ত রয়েছে। অর্থাৎ যে রেখার দ্বারা ভূত্বক এবং গুরুমণ্ডল পরস্পর পৃথক রয়েছে তাকে মোহো বিযুক্তি রেখা বলে।
৪১. সিয়াল ও সিমা কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভূত্বক দুটি উপস্তরে বিভক্ত- সিয়াল ও সিমা।
- সিয়াল (মহাদেশীয় ভূত্বক): পৃথিবীর সবচেয়ে উপরের ভূত্বককে সিয়াল বলা হয়। মহাসাগরের তলদেশে দেখা যায় না। গড় গভীরতা প্রায় ৩০-৪৫ কিমি। SiAL এর অর্থ সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম । মূলত এই দুই উপাদান দিয়ে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ গঠিত বলে একে সিয়াল বলা হয়। আগ্নেয়, পাললিক ও রূপান্তরিত এই তিন ধরনের শিলা দ্বারা এই ভূত্বক গঠিত হলেও আগ্নেয় শিলার (প্রায় ৯৫%) পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। গ্রানাইট জাতীয় আম্লিক আগ্নেয় শিলার প্রাধান্য দেখা যায়। এই শিলা অপেক্ষাকৃত নরম ও হালকা, গড় ঘনত্ব ২.৭৮ গ্রাম/ঘন সেমি।
- সিমা (মহাসাগরীয় ভূত্বক): সিয়াল স্তরের নিচে এই স্তর অবস্থিত। মহাসাগরের তলদেশে দেখা যায়, তবে মহাদেশের নিচেও পাতলা স্তরের আকারে থাকে। গড় গভীরতা প্রায় ৫-৭ কিমি। মূলত সিলিকন ও ম্য়াগনেসিয়াম দিয়ে এই স্তর গঠিত বলে একে SiMA বলা হয়। এটি ক্ষারীয় ব্যাসল্ট জাতীয় আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত। অপেক্ষাকৃত কঠিন ও ভারী এই শিলার গড় ঘনত্ব ২.৯ গ্রাম/ঘন সেমি।
৪২. কনরাড বিযুক্তি কী ?
উত্তরঃ ভূত্বকের সিয়াল এবং সিমা স্তর কনরাড বিযুক্তি রেখার দ্বারা একে অপরের থেকে পৃথক থাকে।
৪৩. গুরুমণ্ডল (Mantle) কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভূত্বক এবং কেন্দ্রমণ্ডলের মাঝামাঝি অবস্থিত ভূস্তরকে গুরুমণ্ডল বলে। ভূত্বক ও গুরুমণ্ডল যেমন মোহো বিযুক্তি রেখা দ্বারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন তেমনি গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডল উইশার্ট – গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা দ্বারা আলাদা হয়ে আছে। এই অর্থে বলাই যাই, মোহো নিযুক্তি এবং উইশার্ট-গুটেনবার্গ নিযুক্তির মাঝের ভূস্তরটি হল গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল। গুরুমন্ডল কঠিন এবং সান্দ্র পদার্থ (Viscous fluid) দ্বারা গঠিত। পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং মোট ভরের ৬৭ শতাংশ এই স্তর অধিকার করে আছে।
৪৪. গুরুমণ্ডলের গভীরতা কত ?
উত্তরঃ প্রায় ২৯০০ কিমি।
৪৫. গুরুমণ্ডলের উষ্ণতা কত ?
উত্তরঃ ভূত্বকের কাছে গুরুমণ্ডলের উষ্ণতা প্রায় ১০০০ ডিগ্রি আর কেন্দ্র মণ্ডলের দিকে প্রায় ৩৭০০ ডিগ্রি।
৪৬. গুরুমণ্ডল কী কী উপাদান দিয়ে গঠিত ?
উত্তরঃ লোহা, নিকেল, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি দিয়ে গঠিত।
৪৭. গুরুমণ্ডলের ঘনত্ব কত ?
উত্তরঃ গুরুমণ্ডলের ঘনত্ব ৩.৫ থেকে ৫.৫ গ্রাম/ঘন সেমি। গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে গুরুমণ্ডলের ঘনত্বও বৃদ্ধি পায়।
৪৮. গুরু মণ্ডলের দুইটি উপস্তর রয়েছে। যথা-
উত্তরঃ
- বহিঃগুরুমণ্ডল
- অন্তঃগুরুমণ্ডল
আরও পড়- শাস্ত্র হিসেবে ভূগোল, প্রথমভাগ