২২. পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরভাগের গঠন সম্পর্কে কীভাবে জানা যায় ?
উত্তরঃ
শিলার নমুনাঃ পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরস্থ শিলার নমুনা সংগ্রহ করেছেন ভূ- বিজ্ঞানীরা। ওই নমুনা গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পৃথিবীর গঠন সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ধারণা পাওয়া যায়।
খনিঃ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য যে খনিগুলি খনন করা হয়েছে, তার শিলার নমুনা থেকেও পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরস্থ গঠনের ধারণা মেলে।
উল্কাপিণ্ডঃ পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত উল্কাপিণ্ডগুলির উপাদানের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর গঠন সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
সমুদ্রগর্ভে ড্রিলিংঃ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রতলে ড্রিলিং করে পৃথিবীর গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
অগ্নুৎপাতঃ আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা বিশ্লেষণ করেও পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে জানা যায়।
এছাড়াও পৃথিবীর অভ্যন্তরের চাপ ও তাপের তারতম্য পর্যবেক্ষণ করে ভূ-অভ্যন্তরের গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।
২৩. ভূতাপীয় অবক্রম (Geo thermal Gradient) কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূ অভ্যন্তরের দিকে গেলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, একে ভূতাপীয় অবক্রম বলে।
২৪. ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি কিমি গভীরতায় গড়ে কত উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ?
উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠ থেকে এক কিলোমিটার গভীরে গেলে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
২৫. পৃথিবীর গড় ঘনত্ব কত ?
উত্তরঃ ৫.৫২ গ্রাম/ঘনসেমি। ভূত্বকের ঘনত্ব ২.৭ গ্রাম/ঘনসেমি এবং পৃথিবীর কেন্দ্রের ঘনত্ব ১৩.৬ গ্রাম/ঘনসেমি।
২৬ ভূপৃষ্ঠ থেকে কেন্দ্রের দিকে গেলে –
উত্তরঃ পৃথিবীর ঘনত্ব, চাপ, তাপ বৃদ্ধি পায়।
২৭. পৃথিবীর কেন্দ্রের চাপ কত ?
উত্তরঃ ৩৭০০ কেজি/বর্গমিটার।
২৮. ভূগোলের যে শাখায় ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনা করা হয়-
উত্তরঃ তাকে সিসমোলজি বা ভূমিকম্পন তরঙ্গবিদ্যা বলা হয়।
২৯. ভূমিকম্পের কেন্দ্র, উপকেন্দ্র এবং ভূমিকম্প তরঙ্গ কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠের গভীরে যে জায়গায় ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। কেন্দ্রের ঠিক উপরে ভূপৃষ্ঠে যে স্থানটি থাকে সেই স্থানটিকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলা হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে কম্পন তরঙ্গ আকারে (ঢেউয়ের মতো) চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, একেই ভূমিকম্প তরঙ্গ বলে। ভূমিকম্প তরঙ্গ দুই প্রকার, দেহ তরঙ্গ এবং পৃষ্ঠ বা পার্শ্ব তরঙ্গ।
৩০. দেহ তরঙ্গকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-
উত্তরঃ প্রাথমিক বা ‘P’ তরঙ্গ এবং মাধ্যমিক বা ‘S’ তরঙ্গ।
আরও পড়- পৃথিবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত ল্যাপলাসের নীহারিকা মতবাদ,
৩১. প্রাথমিক বা ‘P’ তরঙ্গ:
উত্তরঃ
- ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে প্রথমে ভূপৃষ্ঠে আসে।
- কঠিন, তরল, বায়বীয় সব মাধ্যমেই যেতে পারে।
- উচ্চতম ফ্রিকোয়েন্সির ক্ষুদ্রতম তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
- সর্বাধিক দ্রুত গতি সম্পন্ন এবং খুবই ক্ষণস্থায়ী। গতি সেকেন্ডে ৫-১৪ কিমি।
৩২. মাধ্যমিক বা ‘S’ তরঙ্গ:
উত্তরঃ
- প্রাথমিক তরঙ্গের পর ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়।
- কেবলমাত্র গুরুমন্ডল বা শিলামন্ডলের মতো কঠিন মাধ্যম দিয়ে যেতে পারে।
- উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
- মধ্যম গতিসম্পন্ন, গতিবেগ সেকেন্ডে ৩.৫-৭.২ কিমি।
৩৩. পৃষ্ঠ বা পার্শ্ব তরঙ্গ বা ‘L’ তরঙ্গ:
উত্তরঃ
- ‘P’ ও ‘S’ তরঙ্গের পর পার্শ্ব তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছায়।
- শুধুমাত্র শিলামন্ডলের সিয়াল ও সিমা অংশের মতো কঠিন মাধ্যম দিয়ে যেতে পারে।
- সবচেয়ে বিধ্বংসী, ভূমিকম্পের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা আসলে এই তরঙ্গের জন্যই।
- নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির দীর্ঘতম তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
- তুলনামূলক ধীর গতি সম্পন্ন, সেকেন্ডে ৩.৫-৫ কিমি।
৩৪. সিসমোলজি বা ভূকম্পন তরঙ্গবিদ্যার মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরের গঠন সম্পর্কে কীভাবে ধারণা পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক (‘P’ ও ‘S’) তরঙ্গের প্রতিফলন ও প্রতিসরণ বিশ্লেষণ করে ভূ-অভ্যন্তরের গঠন সম্পর্কে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়।
একটু গভীরে জানি…
আমরা জানি প্রাথমিক তরঙ্গ কঠিন, তরল, গ্যাসীয় সব মাধ্যম দিয়েই যেতে পারে। আবার মাধ্যমিক তরঙ্গ শুধুমাত্র কঠিন মাধ্যম দিয়েই যেতে সক্ষম। আবার আমরা এও জানি ভূপৃষ্ঠ থেকে যত গভীরে যাওয়া যায় ততই চাপ এবং ঘনত্ব দুটোই বাড়ে। যে পদার্থ যত বেশি ঘন হবে সেই পদার্থ দিয়ে তত দ্রুত তরঙ্গ যেতে পারবে, এটাই বিজ্ঞানের একটা সাধারণ নিয়ম। তাহলে তো ভূমিকম্পের কোন কেন্দ্র থেকে তরঙ্গ যখন পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে যেত তখন আরও দ্রুত গতিতে যাবার কথা ছিল এবং পৃথিবীর সর্বত্র সেই তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে ভূমিকম্পন অনুভব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয় না বরং একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই ভূমিকম্পের প্রভাব দেখা যায়। এমনটা হওয়ার কারণ হলো, পৃথিবী বিভিন্ন উপাদান দিয়ে গঠিত। যেখানে খুব কঠিন পদার্থ আছে, আবার নরম পদার্থও আছে, তরল যেমন আছে তেমনি আছে অর্ধ তরল পদার্থ।
তরঙ্গ যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যায় অর্থাৎ নরম শিলা থেকে কঠিন শিলায় বা তরল পদার্থের মাধ্যমে যায় তখন তরঙ্গের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। মাধ্যমের ঘনত্ব অনুযায়ী তরঙ্গের এই গতি পরিবর্তনকেই প্রতিসরণ বলা হয়। এই মাধ্যম পরিবর্তনের ফলে কিছুটা তরঙ্গ আলোর মতো প্রতিফলিতও হয়। পাশাপাশি তরঙ্গের গতিও কম বেশি হয়। মাধ্যমিক তরঙ্গ বা পার্শ্ব তরঙ্গ যেহেতু তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যম দিয়ে যেতে পারে না তাই এই তরঙ্গুগুলির গতিপথ অনেক সময় থমকে যায়। ভূমিকম্পের তরঙ্গ কোন দিকে গেল না গেল সমস্ত গতিবিধি সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে জানা যায়।
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোথাও নরম শিলা, কোথাও কঠিন শিলা, কোথাও তরল, কোথাও গ্যাসীয় পদার্থ আছে এবং তার উপর নির্ভর করে ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতিপথ নির্ধারণ হয়। যদি পৃথিবী একই রকম পদার্থ দিয়ে তৈরি হতো তাহলে ভূমিকম্পের কম্পন পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তো। তাই ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরস্থ গঠন সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ধারণা পাওয়া যায়।
৩৫. ভূকম্প ছায়াবলয় কী ?
উত্তরঃ ভূমিকম্প উপকেন্দ্রের বিপরীত দিকে যে অঞ্চলে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক কোনও তরঙ্গই অনুভূত হয় না সেই অঞ্চলকে ভূমিকম্প ছায়াবলয় বলা হয়। উপকেন্দ্র থেকে ১০৪°-১৪০° কৌণিক দূরত্বে ছায়াবলয় অবস্থান করে।
আরও পড়- বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি, প্রথমভাগ