প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর MCQ, Proloyullash kobita question answer

মাধ্যমিকে অসাধারণ রেজাল্ট কে না করতে চায়, সবাই চায়। ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড পরিশ্রম এবং চেষ্টা করে মাধ্যমিকে দুর্দান্ত সাফল্য পেতে। আমরা ‘জীবনযুদ্ধ টিম’ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক প্রস্তুতির সেই পরিশ্রমকে কিছুটা লাঘব করতে কিঞ্চিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখানে বাংলা বিষয়ের সমস্ত পাঠক্রমের প্রশ্ন-উত্তর খুবই উচ্চ মান বজায় রেখে প্রকাশ করছি। ধাপে ধাপে সমস্ত সিলেবাসের বিষয়ই আমরা প্রকাশ করবো। আশা করি আমাদের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ পড়ে অসাধারণ সাফল্য মিলবে।
বাংলা বিষয়ের উত্তর কীভাবে লিখলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যায় তারই কিছু টিপস্ দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণ করো দারুণ উপকৃত হবে।

সব সময় কোনো উত্তর লেখার শুরুতেই কোন কবির বা লেখকের কোন কবিতা বা গল্প থেকে প্রশ্নটি এসেছে তা অবশ্যই লিখতে হবে। আমাদের উত্তরগুলোতে সব সময় প্রথমের ওই অংশটি নেই কিন্তু তোমাদের সেটা প্রত্যেক উত্তরেই লিখতে হবে, মনে রেখো।
উত্তরগুলোতে মাঝে মাঝে বাঁকা হরফে কিছু বাক্য দেওয়া আছে। এর অর্থ হলো ওই বাঁকা বাক্যগুলো যে কোনো উত্তরেই ব্যবহার করা যাবে। ওই বাঁকা বাক্যগুলো হলো অলঙ্কারের মতো, উত্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এমন বাক্যগুলি অনেকটাই বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে।
আর, উত্তরের মধ্যে গল্প বা কবিতায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন পঙ্‌ক্তি/বাক্য ইনভার্টেড কমার ( ‘__’ ) মধ্যে দিতে হবে। এটাও খুব জরুরি।
আমাদের সঙ্গে থাকো ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয়ের উত্তর প্রকাশ করা হবে।

প্রলয়োল্লাস
কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম, (২৫ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৮৭৬) বাংলা সাহিত্যের একজন বাঙালি কবি, লেখক, সাংবাদিক এবং সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তাঁর কবিতা পরাধীন ভারতের জাতীয় সংগ্রামীদের ভীষণ ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাই তাঁকে ‘বিদ্রোহী’ কবি বলা হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল, অগ্নিবীণা, সাম্যবাদী, চক্রবাক, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, ছায়ানট, সর্বহারা, ফণীমনসা প্রভৃতি। আলোচ্য কবিতাটি ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

১ প্রশ্নঃ   “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল”   তাৎপর্য।

উত্তরঃ  ভারতভূমি ইংরেজদের দ্বারা পরাধীনতার শৃঙ্খলে জর্জরিত। ব্রিটিশদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা দেশবাসীকে নিদারুণ দুঃখ – যন্ত্রণা এবং গ্লানির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই অনন্ত পীড়নের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে প্রতিটি ভারতবাসীই দেশমাতৃকার মুক্তি কামনা করেন।

সাম্রাজ্যবাদী শাসক শক্তির পরাধীনতার শৃঙ্খলের বন্ধনকেই কবিতায় ‘সিংহদ্বার’ এর উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে। বস্তুত ‘সিংহদ্বার’ বলতে বড়ো সদর দরজাকে বোঝানো হয়। এখানে ভারতভূমিতে ইংরেজদের নিরুঙ্কুশ শাসনকে বোঝাতে কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। ‘আগল’ মানে বাধা, অর্থাৎ শাসক শক্তিই এখানে ‘আগল’। আর সেই ‘আগল’কে ভাঙতে কবি দেবাদিদেব মহাদেব রূপী দেশের তরুণ দলকে আহ্বান করেছেন। কারণ, শিব যেমন ধ্বংস এবং সৃষ্টির দেবতা তেমনি বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ তরুণ দলই নৈরাজ্যকে শেষ করে দেশে শান্তি ও স্বাধীনতার সূর্যের উদয় ঘটাতে পারে। তারাই পারে পরাধীনতার জাঁতাকলে ক্লিষ্ট দেশবাসীকে মুক্ত করে এক নতুন স্বাধীন দিবসের সূচনা করতে। ভারতমাতাকে কবজা করে ব্রিটিশরা যে সামরিক শক্তির চক্রব্যূহ রচনা করেছে তা ছিন্ন করে তারা অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে আসছে, কবি সেটাই উক্ত পঙ্‌ক্তির মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন।

  • সিংহদ্বার বা সদর দরজা- বাড়ি বা স্কুল- কলেজ ঢোকার যে মেইন বড়ো দরজা থাকে তাকে সিংহদ্বার বা সদর দরজা বলে।
  • মহাদেব রূপী- মহাদেব রূপে দেশের তরুণ ( ইয়ং ) ছেলেদের কল্পনা করা হয়েছে।
  • বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ- সমাজ পরিবর্তন করতে হবে। সমাজে যা যা খারাপ সব পাল্টাতে হবে। গড়তে হবে সুন্দর সমাজ, এমন ভাবনা যাদের থাকে তাদের বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ বলা হয়।
  • গ্লানি- মনের ক্লান্তি বা অবসাদ বা অবসন্ন।
  • নিরুঙ্কুশ শাসন- বাধাহীন শাসন।
  • জাঁতাকলে ক্লিষ্ট- দু’দিকের প্রবল চাপ।
  • চক্রব্যূহ রচনা করা- গোল করে সৈন্য সাজিয়ে ঘেরাও করাকে চক্রব্যূহ রচনা বলে।

২ প্রশ্নঃ     “ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায়

                                সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায় !”   পঙ্‌ক্তিগুলির অর্থ কী ?

উত্তরঃ  বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম “প্রলয়োল্লাস” কবিতায় দেবাদিদেব মহাদেবের চরিত্র চিত্রণের মধ্য দিয়ে দেশের বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ তরুণ দলের কথা বলেছেন। তাদের অসীম শক্তি এবং আধিপত্য বোঝাতে কবি উক্ত পঙ্‌ক্তি দুটির রচনা করেছেন।

ব্রিটিশদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতবাসীকে মুক্তি দিতে তাজা রক্তের স্রোত ধমনী বয়ে দেশমাতৃকার তরুণ সন্তানরা আসছে। তাদের শক্তি ও পরাক্রম জগৎ শ্রেষ্ঠ। ‘মহাকালের চণ্ড – রূপে’ ভারতভূমিকে অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি দিতে তারা আসছে। তাদের আগমনের পথে শিবের মতো তাদের ‘ঝামর কেশ’ এর ঝাপটায় আকাশ যেন কেঁপে উঠে। শুধু তাই নয় যে ধূমকেতু অবারিতভাবে মহাকাশে চক্কর কাটে সেই ধূমকেতুও যেন তাদের প্রবল পরাক্রমে বশ্যতা স্বীকার করে আনুগত্যে তার পুচ্ছ নাড়ায় ! নবজোয়ারের শক্তিতে বলীয়ান দেশের তরুণ সমাজ  আপন মহিমায় কতটা বিশাল এবং অমিত শক্তিধর সেটাই কবির এই পঙ্‌ক্তি দুটিতে প্রকাশ পেয়েছে।

  • মহাদেবের চরিত্র চিত্রণ- মহাদেবের চরিত্রের মধ্য দিয়ে তরুণ ছেলেদের কথা বলেছেন কবি।
  • পরাক্রম- বীরত্ব।      
  • জগৎ শ্রেষ্ট- জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। 
  • অবারিত- বাধাহীনভাবে।
  • অমিত শক্তিধর- খুব শক্তিশালী।

৩ প্রশ্নঃ    “রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে

                                        দোদুল দোলে”     তাৎপর্য

উত্তরঃ     দেবাদিদেব মহাদেব অসীম শক্তি এবং প্রবল পরাক্রমে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেন। তেমনি সংগ্রামী, বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ দেশের তরুণ সমাজও পরাধীনতার জরা-মৃত্যুতে ধুঁকতে থাকা দেশ মাতৃকার মুক্তি কামনায় ব্রতী হয়েছে। দেশের তরুণ বিপ্লবীরাই দেশ-সমাজের সমস্ত অনাচারকে দূরীভূত করে এক স্বচ্ছ- সুন্দর দেশ গড়ার কারিগর। শিবের ন্যায় তারা রূদ্র-ভয়ংকর বীর যোদ্ধা। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তারা সমস্ত অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে। তাই তো তাদের ‘কৃপাণ ঝোলে’ রক্ত মেখে থাকে। তাদের সংহারক রূপটিকে বর্ণনা করতেই কবি রক্তাক্ত কৃপাণের কথা বলেছেন।

  • তরুণ সমাজ- তরুণ ছেলের দল। ( তরুণ= অল্প বয়সী ছেলে )
  • পরাধীনতার জরা-মৃত্যুতে- পরাধীনতার ফলে শোষিত-অত্যাচারিত হয়ে মৃত্যু ঘটা।
  • ধুঁকতে থাকা- ভুগতে থাকা।
  • ব্রতী হওয়া- ধ্যান করা। এখানে দেশের স্বাধীনতার জন্য তরুণদের আপ্রাণ চেষ্টা করাকে বোঝান হয়েছে।
  • অনাচারকে দূরীভূত- অনাচার মানে অন্যায় বা অবিচার, দূরীভূত বলতে দূর করা। অন্যায়-অবিচার দূর করা।
  • সংহারক রূপ- মারতে উদ্যোগী হওয়া মতো রূপ।

আরও পড়- অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর, মাধ্যমিক প্রস্তুতি

৪ প্রশ্নঃ    “মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে

                        মহাকালের চণ্ড-রূপে-

                                        ধূম্র-ধূপে

                    বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর !”    তাৎপর্য

উত্তরঃ  ইংরেজদের স্বৈরাচারী শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ পরাধীন ভারতভূমিকে ‘মৃত্যু-গহন অন্ধকূপ’ বলা হয়েছে। ভারতে ব্রিটিশরা চরম পীড়ন-নিপীড়ন, অত্যাচার চালিয়েছে। তাদের স্বৈরাচারে দেশবাসীদের লাঞ্ছনার শেষ ছিল না। ইংরেজদের অঙ্গুলি হেলনে দেশবাসীর মাথার উপর যখন-তখন নেমে আসত মৃত্যুর পরোয়ানা। দেশবাসীর এই চরম অবমাননার দিনে পরাধীন দেশকে কবি ‘মৃত্যু-গহন অন্ধকূপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। 

দেশ সেবার কাজে ব্রতী তরুণ সমাজ আদি এবং অনন্ত দেবাদিদেব মহাদেবের মতোই রূদ্র-তেজী-পরাক্রমী। সকল অন্যায়-অবিচার-অন্ধকারকে দূর করে  তারা দিগন্তে নতুন সুস্থ-সুন্দর-স্বাধীন সূর্যোদয় করার ক্ষমতা রাখে। তরুণ প্রজন্ম শোষিত-অত্যাচারিত দেশবাসীর কাছে একদিকে যেমন রক্ষাকর্তা তেমনি অত্যাচারী শাসক শক্তির কাছে শিবের ন্যায় ভয়ংকর ধ্বংসকারী রুদ্র শক্তি। ‘মহাকালের চণ্ড-রূপ’ বা ‘বজ্রশিখার মশাল’ ইত্যাদি বর্ণনার মধ্যে বিপ্লবী তরুণদের বারুদের মতো অসীম বিস্ফোরক শক্তিকেই ইঙ্গিত করেছেন কবি।

  • স্বৈরাচারী- যারা কারও কথা শুনে না। যা ভালো বোঝে তাই করে।
  • লাঞ্ছনা- অপমান বা সম্মান নষ্ট।
  • অঙ্গুলি হেলনে- ইশারায়।
  • মৃত্যুর পরোয়ানা- মৃত্যুর হুকুম। ইংরেজরা যখন-তখন ভারতবাসীদের মৃত্যু দণ্ড দিতে পারত।
  • অবমাননা- অবজ্ঞা বা অপমান করা।
  • বারুদের মতো অসীম বিস্ফোরক শক্তি- বারুদ দিয়ে তৈরি বোমের মতোই তরুণদের বিরাট শক্তি-সামর্থ্য থাকে। সেই শক্তিতে তারা সব ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।

প্রশ্নঃ    “অট্টোরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর”  কিসের হট্টগোল কী ব্যাপার পরিষ্কার করে কউ কেউ ?

উত্তরঃ  বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম “প্রলয়োল্লাস” কবিতায় দেবাদিদেব মহাদেবের চরিত্র চিত্রণের মধ্য দিয়ে দেশের বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ তরুণ দলের কথা বলেছেন। দেশ সেবার কাজে ব্রতী তরুণ সমাজ আদি এবং অনন্ত দেবাদিদেব মহাদেবের মতোই রূদ্র-তেজী-পরাক্রমী। সকল অন্যায়-অবিচার-অন্ধকারকে দূর করে  তারা দিগন্তে নতুন সুস্থ-সুন্দর-স্বাধীন সূর্যোদয় করার ক্ষমতা রাখে। তরুণ প্রজন্ম শোষিত-অত্যাচারিত দেশবাসীর কাছে একদিকে যেমন রক্ষাকর্তা তেমনি অত্যাচারী শাসক শক্তির কাছে শিবের ন্যায় ভয়ংকর ধ্বংসকারী রুদ্র শক্তি। ‘মহাকালের চণ্ড-রূপ’ বা ‘বজ্রশিখার মশাল’ ইত্যাদি বর্ণনার মধ্যে বিপ্লবী তরুণদের বারুদের মতো অসীম বিস্ফোরক শক্তিকেই ইঙ্গিত করেছেন কবি।  স্বৈরাচারী শাসক শক্তির বিরুদ্ধে দেশমাতৃকার তরুণ সন্তানদের হুঙ্কার-গর্জনকেই কবি ‘অট্টরোলের হট্টগোল’ বলেছেন। আর তাদের বীরত্বের শাসানিতেই চারদিকে যেন থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সামাজিক পরিবর্তনের এই আসন্ন মুহূর্তে তাদের আগমনে আকাশ-বাতাসে যে প্রলয়ের ঝংকার বেজে উঠেছে তার ভয়ংকরতা অনুমান করেই জনগণের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার ঘটেছে। মহাপ্রলয়ের আশঙ্কাতেই চারদিক যেন নিশ্চুপ- নিস্তব্ধ।  একেই কবি ‘স্তব্ধ চরাচর’ বলেছেন। 

  • শাসানি- ভয় দেখান।
  • ভীতির সঞ্চার- ভয়ের ভাব জেগেছে।
  • মহাপ্রলয়ের আশঙ্কাতেই- মহাপ্রলয় আসছে তাই সব মানুষ ভয়ে চুপ করে আছে।

৬ প্রশ্নঃ   “দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়

                    দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায় !”    তাৎপর্য

উত্তরঃ  বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম “প্রলয়োল্লাস” কবিতায় দেবাদিদেব মহাদেবের চরিত্র চিত্রণের মধ্য দিয়ে দেশের বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ তরুণ দলের কথা বলেছেন। ‘তাহার’ বলতে সেই তরুণ দলকেই বোঝান হয়েছে। তাদের অসীম শক্তি এবং আধিপত্য বোঝাতে কবি উক্ত পঙক্তি দুটির রচনা করেছেন।

ব্রিটিশদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতবাসীকে মুক্তি দিতে তাজা রক্তের স্রোত ধমনী বয়ে দেশমাতৃকার তরুণ সন্তানরা আসছে। তাদের শক্তি ও পরাক্রম জগৎ শ্রেষ্ঠ। দেশ সেবার কাজে ব্রতী তরুণ সমাজ আদি এবং অনন্ত দেবাদিদেব মহাদেবের মতোই রূদ্র-তেজী-পরাক্রমী-বীর। ‘মহাকালের চণ্ড – রূপে’ এবং বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে’ ভারতভূমিকে অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি দিতে তারা আসছে। তারা যেন বারুদের মতো অসীম বিস্ফোরক শক্তির অধিকারী। তাদের চোখের মণির তেজ যেন দ্বিপ্রহরের গনগনে সূর্যের মতো প্রখর। আর তাদের বীরত্বের শাসানিতেই চারদিকে যেন থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সামাজিক পরিবর্তনের এই আসন্ন মুহূর্তে তাদের আগমনে আকাশ-বাতাসে যে প্রলয়ের ঝংকার বেজে উঠেছে তার ভয়ংকরতা অনুমান করেই জনগণ তথা ‘অশুভ’ শক্তির মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার ঘটেছে। মহাপ্রলয়ের আশঙ্কাতেই চারদিক যেন নিশ্চুপ- নিস্তব্ধ। একেই কবি ‘স্তব্ধ চরাচর’ বলেছেন। তাদের ভীতি উদ্রেককর মূর্তি যেন চারিদিকে ‘কাঁদন লুটায়’ অর্থাৎ ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করে। কবি তরুণ দেশ প্রেমীদের জয়গান করতেই উক্ত পঙক্তি দু’টি রচনা করেছেন।

  • ভীতি উদ্রেককর- ভয় ধরায় এমন।
  • ভয়ের বাতাবরণ- ভয়ের পরিবেশ।

প্রশ্নঃ   “বিন্দু তাহার নয়নজলে

                    সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে

                                        কপোলতলে !

              বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর-“ পঙ্‌ক্তিগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ কী ?

উত্তরঃ  বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম “প্রলয়োল্লাস” কবিতায় দেবাদিদেব মহাদেবের চরিত্র চিত্রণের মধ্য দিয়ে দেশের বিপ্লবী চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ তরুণ দলের কথা বলেছেন। তাদের অসীম শক্তি এবং আধিপত্য বোঝাতে কবি উক্ত পঙ্‌ক্তি দুটির রচনা করেছেন।

ব্রিটিশদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতবাসীকে মুক্তি দিতে তাজা রক্তের স্রোত ধমনী বয়ে দেশমাতৃকার তরুণ সন্তানরা আসছে। তাদের শক্তি ও পরাক্রম জগৎ শ্রেষ্ঠ। দেশ সেবার কাজে ব্রতী তরুণ সমাজ আদি এবং অনন্ত দেবাদিদেব মহাদেবের মতোই রূদ্র-তেজী-পরাক্রমী-বীর। সেই দৃপ্ত তরুণদের এক ফোঁটা অশ্রু যখন গণ্ডদেশ বেয়ে ঝরে পড়ে তখন ‘সপ্ত মহাসিন্ধু’র কম্পন যেন তাদের ‘কপোলতলে’ই দেখা যায়। তাদের অসীম সাহস, আত্মত্যাগ ও পরাক্রমেই যুগ যুগ ধরে জগৎ-জননীর মান-মর্যাদা রক্ষা হয়ে আসছে। তারাই দেশভক্তিতে উদ্‌বুদ্ধ হয়ে দেশমাতৃকার সেবা-যত্ন করে। যখনই মাতৃভূমির উপর কোনও সংকট আসে দেশের সংগ্রামী তরুণরাই এগিয়ে এসে লড়াই করে। এমনকি তারা নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতেও পিছপা হয় না। তাই কবি “বিশ্বমায়ের আসন” শিব রূপী বজ্রকঠিন ছেলেরদলের বাহুর শক্তিতেই রক্ষিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

  • দৃপ্ত তরুণদের- কম বয়সী ছেলেদের খুব সাহস, বীরত্ব থাকে, তাই তাদের দৃপ্ত তরুণ বলা হয়।
  • জগৎ-জননী- দেশকে যেমন মা বলা হয় তেমনি গোটা জগতকেও জগৎ-জননী বলা যেতে পারে।
  • গণ্ডদেশ বা কপোল- গাল।
  • উদ্‌বুদ্ধ হওয়া- কোনও কাজে অনুপ্রাণিত হওয়া।
  • উৎসর্গ করা- দান করা। যেমন, দেবতাকে ফুল ও প্রসাদ উৎসর্গ করা হয়।

আরও পড়- প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর, PART 2

সবার সঙ্গে শেয়ার করুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a comment