১ প্রশ্নঃ “ একটি তারা এখন আকাশে রয়েছে” তারাটির পরিচয় দাও।
উত্তরঃ প্রকৃতি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘একটি তারা’র উল্লেখ করেছেন। কবি এখানে ভোরের শুকতারার কথা বলেছেন।
কবিতায় কবি দু’টি উপমার সাহায্যে সুন্দরভাবে ওই ‘তারা’র বর্ণনা দিয়েছেন। প্রথমত, ‘তারা’টিকে তিনি ‘গোধূলিমদিত’ মেয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘গোধূলিমদিত’ মেয়ে বলতে কবি তেমন সুন্দর নয় বা উজ্জ্বল আকর্ষণীয় নয় বলতে চেয়েছেন। যে মেয়ে সামাজিক দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে ‘অসুন্দর’ বলে বিবেচিত। সেই মেয়েও বাসরঘরে যেন অপরূপা হয়ে বিরাজ করে। সমাজে অনেক মেয়ের ভিড়ে যে মেয়ে তেমন ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয় না, সেই মেয়েও কিন্তু বাসর ঘরে বিশেষ নারীর মর্যাদা লাভ করে। তেমনি ভোরের ওই শুকতারাকে রাত্রের হাজার উজ্জ্বল তারার মাঝে খুঁজেই পাওয়া যায় না। কিন্তু ভোরের আলোয় সব তারা যখন আকাশে মিলিয়ে যায় তখন শুকতারা উজ্জ্বল হয়ে মিটমিট করতে থাকে। তার দৃপ্ত উপস্থিতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দ্বিতীয় উপমা তিনি ব্যবহার করেছেন মিশরীয় মুক্তার সঙ্গে। ‘মিশরের মানুষী’ কবির নীল মদের গেলাসে যে মুক্তা রেখেছিল তার উজ্জ্বলতাও ওই তারার মতোই সমান উজ্জ্বল। সৌন্দর্যে-শোভায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কবির ভাষায় “তেমনি একটি তারা আকাশে জ্বলছে এখনও।“
- উপমা- দুটি জিনিসের তুলনা করা। যেমন- চাঁদের মতো মুখ (চন্দ্রমুখী) ।
- সামাজিক দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে ‘অসুন্দর’- সমাজে যাকে খুব সুন্দর নয় বলা হয়।
- অপরূপা হয়ে বিরাজ করে- খারাপ দেখতে মেয়েকেও বাসরঘরে সুন্দর বলে মনে হয়।
- সমর্থ হয় না- পারে না।
- বিশেষ নারীর মর্যাদা লাভ করে- স্পেশাল হয়ে উঠে সবার কাছে।
- দৃপ্ত উপস্থিতি- উজ্জ্বল ভাবে অবস্থান করে।
২ প্রশ্নঃ “একটা অদ্ভুত শব্দ” তাৎপর্য।
উত্তরঃ কবিতায় বাদামি হরিণটি চিতাবাঘিনীর হিংস্র দাঁত থেকে বাঁচতে সারারাত লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়িয়েছিল। মেহগনির মতো কালো অন্ধকারে সুন্দরী ও অর্জুন বনে নিজেকে আত্মগোপন করে, যাতে কেউ তাকে খুঁজে না পায়। ভোরের আলোর অপেক্ষা করতে থাকে সে। ভোরের সোনালি আলোর মধ্যেই যেন রয়েছে তার বেঁচে থাকার নতুন আশা। ক্রমশ পুব আকাশে আলো দেখা দেয় যা হরিণের বুকে সাহস জাগায়। ‘কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ সুগন্ধি ঘাস’ খেয়ে সে ক্লান্ত দেহ-মনে বল নিয়ে আসে। ঘুমহীন অবস শরীরে ফূর্তি এবং ‘একটা বিস্তীর্ণ উল্লাস’ নিয়ে আসার জন্য জলের ‘শীতল ঢেউয়ে’ গা টাকে ভিজিয়ে নেয়। ভরা পেট ও শীতল জলের ছোঁয়ায় চনমনে হয়ে উঠে হরিণের দেহ-মন। মনে জাগে হরিণীর বাসনা।
কিন্তু একটা ‘অদ্ভুদ শব্দ’ নতুন দিনটিকে সুন্দর ও আনন্দে শুরু করতে চাওয়া হরিণের জীবনে মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসে। ওই ‘অদ্ভুদ শব্দ’ আসলে বন্দুক চালানোর শব্দ। তথাকথিত সভ্য মানুষের চরিত্রে মিশে রয়েছে পাশবিক নিষ্ঠুরতা-বর্বরতা। এই হরিণটিকে হত্যা করার মধ্য দিয়েই মানুষের সেই আদিম নৃশংস, দানবীয় রূপটি প্রকট হয়ে পড়ে। ওই ‘অদ্ভুদ শব্দ’ এর মধ্য দিয়ে কবি যেন আমরা যারা সভ্য বলে নিজেদের গর্ববোধ করে থাকি; তাদের হিংস্র-নগ্নরূপটিকে জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। শিকার কবিতাটি শুধু একটি হরিণের মৃত্যুর গল্প বলে না, সমাজের কুৎসিত রূপটিকে উন্মোচন করে।
- আত্মগোপন করা- নিজেকে লুকিয়ে রাখা।
- তথাকথিত সভ্য- যাদের সভ্য বলা হয় কিন্তু আসলে তারা সভ্য নয় তাদের তথাকথিত সভ্য বলা হয়।
- পাশবিক নিষ্ঠুরতা-বর্বরতা- পশুর মতো হিংস্র-নিষ্ঠুর ।
- জনসমক্ষে- সবার সামনে।
- উন্মোচন করা- প্রকাশ করা।
- আদিম নৃশংস, দানবীয় রূপ- নিষ্ঠুর অমানবিক রূপ।
আরও পড়- Olympic Games History: অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস ও তার ৩ হাজার বছরের জীবনচক্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয়