পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় সহায়তা করার জন্য ২০২১ সালে ‘তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প’ চালু করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় প্রথমদিকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের মোবাইল বা ট্যাবলেট কেনার জন্য ১০০০০ টাকা এককালীন অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবার থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও এই প্রকল্পের টাকা দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর। প্রসঙ্গত, করোনা অতিমারির সময়ে স্কুল-কলেজের স্বাভাবিক পঠনপাঠন স্তব্ধ হয়ে যায়। ফলে বিকল্প শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ব্যাপক প্রসার ঘটে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার। বর্তমান ডিজিটাল যুগে ছাত্রছত্রীরা যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি লাভ করতে পারে, মূলত সেই উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়।
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের সুবিধা
- আর্থিক সহায়তা প্রদান: এই প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর্থিক ভাবে পিছেয়ে পড়া বর্গের ছাত্রছাত্রীদের ₹১০,০০০ টাকা এককালীন আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এই টাকা পড়ুয়াদের মোবাইল বা ট্যাবলেট কেনার জন্য দেওয়া হয়।
- ডিজিটাল দুনিয়ার পরিচয়: ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অভ্যস্ত করান এই প্রকল্পের একটি মুখ্য উদ্দেশ্যে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে বদলাচ্ছে পঠনপাঠনের ধরন। শিক্ষা ক্ষেত্রেও দিন দিন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাতে মোবাইল বা ট্যাবলেট থাকলে পড়ুয়ারা পরিবর্তনশীল শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খেতে পারবে।
- শিক্ষার মান উন্নয়ন: ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করে নিতে পারবে। বিশেষ করে বর্তমানে বেশির ভাগ কোচিং সংস্থা অনলাইনেই বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি দিয়ে থাকে। সামগ্রিক ভাবে এতে শিক্ষার মান বাড়বে।
কারা এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য
- আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- কেবলমাত্র একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাই এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবে।
- শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সরকার অনুমোদিত স্কুলে পড়াশোনা করতে হবে।
- আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার নিচে হতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- আধার কার্ড
- ঠিকানার প্রমাণপত্র
- শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র (মার্কশিট)
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ
- পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ
- জাতিগত শংসাপত্র (Caste certificate, প্রযোজ্য হলে)
আবেদন পদ্ধতি
খুব সহজেই এই প্রকল্পের জন্য ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারে। সাধারণত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বেই পড়ুয়ারা যাতে প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য আবেদনের সমস্ত প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করে। তবুও প্রথাগত আবেদনের ধাপগুলি নিচে দেওয়া হলো-
- তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের সুবিধা পেতে শিক্ষার্থীকে সর্ব প্রথম নিজস্ব বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
- স্টুডেন্ট ডিসিএফ ( Student DCF) বলে একটি ফর্ম রয়েছে সেটি শিক্ষার্থীদের নিতে হবে।
- শিক্ষার্থীর নাম, অভিভাবকের নাম, বিদ্যালয়ের নাম, আধার কার্ড নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে।
- সব শেষে পূরণ করা ফর্মটি উপযুক্ত ডকুমেন্ট সহ বিদ্যালয়ে জমা করতে হবে।
শেষকথা
পড়াশোনার জন্য মোবাইল বা ট্যাবলেট কেনার টাকা দেওয়াটা অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। তবে সেই টাকা যাতে সঠিক খাতে ব্যয় হয় এবং পড়ুয়ারাও যাতে সেই টাকার সদ্ব্যবহার করে সেটাও নিশ্চিত হওয়া দরকার। নইলে প্রকল্পটির উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলার আছে, যারা প্রকল্পের টাকা পেয়ে মোবাইল বা ট্যাবলেট কিনছো, তারা যেন শুধুমাত্র বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থেকো না। শিক্ষার হাতিয়ার হিসাবে যন্ত্রটিকে ব্যবহার কর। এতে ব্যক্তি হিসাবে তোমাদেরই মঙ্গল সাধন হবে।
আরও পড়ুন- Mpox Outbreak: এমপক্স ভাইরাস কি ? আবার কি করোনার মতো পরিস্থিতি হবে ?
আরও পড়ুন- মিশরের পিরামিড রহস্য ফাঁস ! পিরামিড সম্পর্কে অজানা তথ্য ভাণ্ডার
আরও পড়ুন- WBCS পরীক্ষা সম্পর্কে A-Z খাঁটি তথ্য, In Depth Details