Olympic Games History: অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস ও তার ৩ হাজার বছরের জীবনচক্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আবার এসে গেল ‘Olympic’ মরশুম, The Greatest Show on Earth । আজকের বর্ণাঢ্য অলিম্পিক প্রতিযোগিতার শুরুটা কিন্তু ক্যালেন্ডার শুরুও কয়েকশো বছর আগে ! একদম ঠিক শুনেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অলিম্পিক খেলার জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২৮০০ বছর আগে। ৪ বছর অন্তর টানা ১২০০ বছর চলার পর আসে এক দীর্ঘ বিরতি। তারপর প্রায় ১৫০০ বছর পর আবার নতুন করে শুরু হয় অলিম্পিক প্রতিযোগিতা। বোঝায় যাচ্ছে প্রায় তিন হাজার বছরের ইতিহাসকে সঙ্গী করে অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে অলিম্পিক আজকের আধুনিক সময়ে হাজির হয়েছে। অলিম্পিকের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি ও কিছু রোচক তথ্যে পরিপূর্ণ এই প্রতিবেদন আপনার মস্তিষ্কের উর্বর ভূমিতে ক্ষুদ্র একটি জ্ঞানবৃক্ষ রোপণ করবে বলেই আশা রাখি।

অলিম্পিকের ‘ভূমিষ্ঠ লগ্ন’

ঠিক কবে অলিম্পিক খেলার সূচনা হয়েছিল তা নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি যেমন রয়েছে তেমনি ঐতিহাসিকদের মধ্যেও মতভেদ আছে। তবে নানান ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে মনে করা হয়, প্রথম অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয় ৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রিসের অলিম্পিয়া শহরে। শুরুর দিকে কেবলমাত্র বিভিন্ন দৌড়জাতীয় প্রতিযোগিতা হত, পরে ধীরে ধীরে জ্যাবলিন থ্রো, বক্সিং, কুস্তি, রথদৌড়, লং জাম্প ইত্যাদি অন্যান্য খেলাগুলি অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে।

শুরুতে অলিম্পিক খেলার পাশাপাশি একটি ধার্মিক অনুষ্ঠানও ছিল। প্রাচীন গ্রিক পুরাণের দেবতা জিউসের (Zeus) সম্মানে অলিম্পিক খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আদিম অলিম্পিক এক ধরনের ‘ক্রীড়া উৎসব’ হিসেবে উদযাপন করা হত। কেবলমাত্র পুরুষরাই এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন এবং প্রতিযোগীদের নগ্ন অবস্থায় খেলায় অংশগ্রহণ করতে হত।

এখন যেমন প্রতি চার বছর অন্তর আলাদা আলাদা দেশের ভিন্ন ভিন্ন শহরে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয় আগে তেমন ছিল না। আগে চার বছর অন্তর একই স্থানে অলিম্পিক হত। সময়ের সঙ্গে অলিম্পিক খেলার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এমনকি এক অলিম্পিক থেকে পরের অলিম্পিকের চার বছরের সময়কালকে অলিম্পিয়াড (Olympiad) বলা শুরু হয়।

সেই সময় শুধু যে অলিম্পিয়া শহরেই খেলার প্রতিযোগিতা হত এমন কিন্তু নয়। প্রাচীন গ্রিসে ছোট ছোট অনেক নগর রাষ্ট্র ছিল। অলিম্পিয়া বাদেও অন্যান্য শহরেও খেলায় আয়োজন করা হত। এই সব খেলার প্রতিযোগিতাগুলিকে ‘Classical Games’ বলা হত। কিন্তু অলিম্পিয়াতে সাংগঠনিক ভাবে ও সফলতার সঙ্গে খেলা আয়োজিত হত এবং এখানে সবচেয়ে বড়ো মানের খেলা হত বলে এই প্রতিযোগিতাকেই আধুনিক অলিম্পিকের পূর্বসূরী ধরা হয়।

আরও পড়ুন- ITI কোর্স কী ? কী কী ITI কোর্স আছে ? ITI কোর্স করে কী কী চাকরি পাওয়া যায় ? click to know all

প্রথম অলিম্পিকে প্রথম মেডেল বিজয়ী

ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী ৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রথম অলিম্পিকে প্রথম পদক জিতেছিলেন করবাস (Coroebus of Elis)। দৌড় প্রতিযোগিতায় তিনি পদক জয়লাভ করেন। করবাস একজন রাঁধুনি ছিলেন। সেই সময় খেলোয়াড়রা কেউই পেশাদার ছিলেন না। তারা সবাই বছরভর নিজের নিজের পেশায় ব্যস্ত থাকতেন, অলিম্পিক শুরু হলে কয়েকদিনের অনুশীলনে ময়দানে নেমে পড়তেন। অলিম্পিক বিজয়ীরা পরবর্তীতে গ্রিস সাম্রাজ্যে বীরের সম্মান পেতে থাকেন। তাঁরা হয়ে উঠলেন ‘জাতীয় নায়ক’ (National Hero)। মানুষের মধ্যে অলিম্পিক জেতার আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হল ফলে এসে গেল খেলায় পেশাদারিত্ব।

প্রাচীন অলিম্পিকের সূর্যাস্ত

চতুর্থ শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রীস রাষ্ট্রগুলি রোমান সাম্রাজ্যের দখলে চলে আসে। রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্মের আধিপত্য স্থাপন হয়। পূর্বে গ্রিসে অনুষ্ঠিত খেলার প্রতিযোগিতাগুলি রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হত। ফলে সেগুলি বেশ জাঁকজমক পূর্ণ ছিল। কিন্তু রোমান রাজারা গ্রিসের প্রচলিত ‘ক্রীড়া উৎসব’ নিয়ে উদাসীন ছিলেন। এই উদাসীনতার কারণ দুটি, একটি ধার্মিক এবং অপরটি মানসিকতার। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী রোমানরা গ্রিক দেবতা জিউসের সম্মানে অনুষ্ঠিত খেলার উৎসবকে মান্যতা দিতে চায়নি। তাদের কাছে খেলাগুলি নিতান্তই শিশুসুলভ বলে মনে হয়েছে। এর চূড়ান্ত পরিণতি হিসাবে ৩৯৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াস (Theodosius l ) অলিম্পিক খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সম্রাট পুরোপুরি ধার্মিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর অভিযোগ অলিম্পিক খেলা অখ্রিস্টীয় ধর্মকে উৎসাহিত করছে (paganism)। এরপর প্রায় দীর্ঘ ১৫০০ বছর অলিম্পিক খেলা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। উনিশ শতকে আবার একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় আধুনিক অলিম্পিক গেমের।

আধুনিক অবতারে অলিম্পিকের পুনর্জন্ম

১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতান্ত্রিক ফ্রান্সের সূচনা করে। ইউরোপের ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৮২১ সালে গ্রিসেও স্বাধীনতার সংগ্রাম (Greek war of independence) শুরু হয়। সেই সময় গ্রিস উসমানীয় সাম্রাজ্যের (Ottoman Empire) অধীনে ছিল। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৮৩২ সালে Treaty of Constantinople এর মাধ্যমে গ্রিস স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন করে আবার প্রাচীন গ্রিসের গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস দেখা দেয়। ওই সময়ে একজন গ্রিক কবি ও সাংবাদিক Panagiotic Soutsos ১৮৩৩ সালে তাঁর ‘Dialogue of the dead’ নামে কবিতায় গ্রিসের প্রাচীন সোনালী যুগকে ফিরিয়ে আনার ডাক দেন। তিনি তাঁর লেখায় অলিম্পিক পুনরায় চালু করার কথা বলেন। এমনকি গ্রিসের এক মন্ত্রীকে চিঠি পর্যন্ত লেখেন অলিম্পিক চালু করার বিষয়ে।

কবি Soutsos এর ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে Evangelos Zappas নামে এক বিত্তশালী গ্রিক নাগরিক ১৮৫৬ সালে গ্রিক সরকারকে পুনরায় অলিম্পিক শুরু করার প্রস্তাব দেন। এবং তিনি যে অলিম্পিক আয়োজনের সমস্ত খরচ বহন করবেন সেটাও জানিয়ে দেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে জাপাস অলিম্পিক আয়োজন করতে সফল হন। দীর্ঘ ১৫০০ বছর পরে গ্রিসে আবার ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে অ্যাথেন্স (Athens) শহরে খেলার আসর বসে। জাপাস এই খেলার অর্থ প্রদানকারী ও মূল উদ্যোগী হওয়ায় একে ‘জাপাস অলিম্পিক’ও (Zappas Olympic) বলা হয়। জাপাসের অর্থেই Panathenaic নামে একটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয় এবং সেখানেই নতুন অলিম্পিকের খেলাগুলি অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে ১৮৭০, ১৮৭৫ এবং ১৮৮৮ সালে আবার এই গেমের আয়োজন করা হয়। নতুন করে আবার অলিম্পিক শুরু করা হলেও প্রতিযোগীরা মূলত গ্রিসের অধিবাসী ছিলেন এবং সামান্য কিছু পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের। সেই অর্থে ‘জাপাস অলিম্পিক’ আন্তর্জাতিক মানের ছিল না।

গ্রিসের পাশাপাশি ইংল্যান্ডেও অলিম্পিক শুরু করার একটা চেষ্টা দেখা দিয়েছিল। উইলিয়াম পেনি ব্রুকস (William Penny Brookes), একজন ব্রিটিশ ডাক্তারও একটি জাতীয় অলিম্পিক গেমের আয়োজন করার প্রয়াস করেন। তিনি ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে  ‘Annual Wenlock Olympic Games’  নামে অলিম্পিক গেমের আয়োজন করেন। সেখানে ব্রিটেনের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু জাপাস বা ব্রুকসের অলিম্পিক শুধু জাতীয় স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। সারা পৃথিবীর প্রতিযোগীরা তাতে অংশ নেননি। ব্রুকসেই প্রথম একটি আন্তর্জাতিক স্তরের অলিম্পিক গেমের আয়োজনের ধারণা পোষণ করেন। যেখানে সারা পৃথিবীর প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করবে।

ব্রুকসের আন্তর্জাতিক অলিম্পিকের ধারণাকে বাস্তবায়িত করেন ফরাসি শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ Pierre De Coubertin । পিয়ের কুরবেটিনেই হলেন আধুনিক অলিম্পিকের জনক। তিনি ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে অলিম্পিক গেম পরিচালনা করার জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (International Olympic Committee -IOC) গঠন করেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবী জুড়ে ১৪টি দেশের খেলোয়ারদের নিয়ে প্রথম প্রকৃত আন্তর্জাতিক অলিম্পিক গেম অনুষ্ঠিত হয় অ্যাথেন্সের Panathenaic স্টেডিয়ামে। সেই থেকে আধুনিক অলিম্পিকের জয়যাত্রা আজ পর্যন্ত চলছে। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অলিম্পিকের আয়োজন করা হয়নি, তাছাড়া চার বছর অন্তর লাগাতার বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে অলিম্পিক আয়োজিত হয়েছে। ২০২৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে অলিম্পিক আয়োজন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- WBCS পরীক্ষা সম্পর্কে একটি A-Z তথ্য ভাণ্ডার

আরও পড়ুন- UGC, NET, JRF, NTA এই সব কী ? NET এবং JRF কী আলাদা পরীক্ষা ? JRF এর সুবিধা কী ? দেশের অধ্যাপক জগতের বিস্তারিত তথ্য জানুন এক ক্লিকেই

আরও পড়ুন- হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স কী ? যোগ্যতা, চাকরির সুযোগ, কলেজ, কোর্স ফি ইত্যাদি সমস্ত কিছু এক নজরে:

সবার সঙ্গে শেয়ার করুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a comment