আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর, দশম শ্রেণির আফ্রিকা কবিতা: Afrika Kobita Question Answer, Part 2

মাধ্যমিকে অসাধারণ রেজাল্ট কে না করতে চায়, সবাই চায়। ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড পরিশ্রম এবং চেষ্টা করে মাধ্যমিকে দুর্দান্ত সাফল্য পেতে। আমরা ‘জীবনযুদ্ধ টিম’ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক প্রস্তুতির সেই পরিশ্রমকে কিছুটা লাঘব করতে কিঞ্চিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখানে বাংলা বিষয়ের সমস্ত পাঠক্রমের প্রশ্ন-উত্তর খুবই উচ্চ মান বজায় রেখে প্রকাশ করছি। ধাপে ধাপে সমস্ত সিলেবাসের বিষয়ই আমরা প্রকাশ করবো। আশা করি আমাদের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ পড়ে অসাধারণ সাফল্য মিলবে।
বাংলা বিষয়ের উত্তর কীভাবে লিখলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যায় তারই কিছু টিপস্ দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণ করো দারুণ উপকৃত হবে।

সব সময় কোনো উত্তর লেখার শুরুতেই কোন কবির বা লেখকের কোন কবিতা বা গল্প থেকে প্রশ্নটি এসেছে তা অবশ্যই লিখতে হবে। আমাদের উত্তরগুলোতে সব সময় প্রথমের ওই অংশটি নেই কিন্তু তোমাদের সেটা প্রত্যেক উত্তরেই লিখতে হবে, মনে রেখো।
উত্তরগুলোতে মাঝে মাঝে বাঁকা হরফে কিছু বাক্য দেওয়া আছে। এর অর্থ হলো ওই বাঁকা বাক্যগুলো যে কোনো উত্তরেই ব্যবহার করা যাবে। ওই বাঁকা বাক্যগুলো হলো অলঙ্কারের মতো, উত্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এমন বাক্যগুলি অনেকটাই বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে।
আর, উত্তরের মধ্যে গল্প বা কবিতায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন পঙ্‌ক্তি/বাক্য ইনভার্টেড কমার ( ‘__’ ) মধ্যে দিতে হবে। এটাও খুব জরুরি।
আমাদের সঙ্গে থাকো ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয়ের উত্তর প্রকাশ করা হবে।

আফ্রিকা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি অসাধারণ কবিতা। তার বিস্ময়কর কবি প্রতিভা কবিতাটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত। আফ্রিকা মহাদেশকে সসাম্রাজ্যবাদী শক্তি এক সময় কবজা করে অধিবাসীদের উপর চালায় অকথ্য অত্যাচার, সেই মর্মভেদী প্রেক্ষাপটে কবিতাটি রচিত। মূল কাব্যগ্রন্থের নাম ‘পত্রপুট’।

আরও দেখো- ‘আফ্রিকা’ কবিতার প্রশ্ন-উত্তর পর্বের প্রথম ধাপে ৭টি উত্তর দেওয়া হয়েছিল। আজ তার শেষ কিস্তি। আগের উত্তরগুলো পড়তে চাইলে এখানে দেখো- Click Here

৮. ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে’  কাদের নখ তীক্ষ্ণ ? কেন তাদের নেকড়ের চেয়ে ধারালো নখ কবি বলেছেন ?

উত্তরঃ  ‘যাদের’ বলতে তথাকথিত সভ্য জগতের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কথা বলা হয়েছে। 

নেকড়ে একটি হিংস্র জন্তু হিসাবে পরিচিত। তার নখের তীক্ষ্ণতা জীবটির চূড়ান্ত হিংস্রতাকেই প্রকাশ করে। কিন্তু কবির চোখে যে সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী লোভী শক্তি আফ্রিকাকে দখল করে নিজেদের সাম্রাজ্য কায়েম করতে গিয়েছিল; তাদের নির্লজ্জ-নিষ্ঠুরতা যেন নেকড়ের ‘তীক্ষ্ণ’ নখের হিংস্রতাকেও হার মানায়। এতোটাই তারা নৃশংস ছিল। তাদের হিংস্রতার প্রকৃতি বোঝাতেই কবি এমন কথা বলেছেন।   

  • সাম্রাজ্য কায়েম করা- সাম্রাজ্য বানাতে যাওয়া।
  • নৃশংস-  খুব নিষ্ঠুর। 

 

৯. ‘সভ্যের বর্বর লোভ

  নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষিকতা।‘ তাৎপর্য।

উত্তরঃ তথাকথিত সভ্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা আফ্রিকাতেও  তাদের কবজা জমায়। আফ্রিকা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি ভূখন্ড। সভ্য জগতের সীমাহীন লোলুপ দৃষ্টি সেই সম্পদের উপরই। তাদের অন্তহীন লোভকেই কবি ‘বর্বর লোভ’ বলে অভিহিত করেছেন। আর সেই লোভের বশবর্তী হয়ে তারা যেন মনুষ্যত্ব ভুলে গিয়েছে। আফ্রিকার অধিবাসিদের উপর তাদের ভাষাহীন নির্যাতন চরম অমানবিক হয়ে উঠেছে। তাদের পৈশাচিক কার্যকলাপে প্রকাশ পেয়েছে চরম নিষ্ঠুরতা । ‘সভ্য’দের আসল নগ্ন রূপটিই কবি তাঁর শাণিত কলমে এখানে প্রকাশ করেছে।

  • লোভের বশবর্তী- লোভের অধীন হওয়া/ খুব লোভী হওয়া।
  • পৈশাচিক কার্যকলাপ- অত্যন্ত অত্যাচার করা।
  • অমানবিক- মায়া-মমতা-স্নেহ-ভালোবাসা না থাকা।
  • শাণিত- ধারালো

১০ ‘তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে

                     পঙ্কিল হলো ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে’   – তাৎপর্য।

উত্তরঃ   তথাকথিত সভ্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা আফ্রিকাতেও  তাদের কবজা জমায়। আফ্রিকা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি ভূখন্ড। সভ্য জগতের সীমাহীন লোলুপ দৃষ্টি সেই সম্পদের উপরই। তাদের অন্তহীন লোভকেই কবি ‘বর্বর লোভ’ বলে অভিহিত করেছেন। আর সেই লোভের বশবর্তী হয়ে তারা যেন মনুষ্যত্ব ভুলে গিয়েছে। আফ্রিকার অধিবাসিদের উপর তাদের ভাষাহীন নির্যাতন চরম অমানবিক হয়ে উঠেছে। তাদের পৈশাচিক কার্যকলাপে প্রকাশ পেয়েছে চরম নিষ্ঠুরতা। মানুষ যখন অত্যধিক পীড়ন-নিপীড়নের শিকার হয় তখন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে। নিঃশব্দ চোখের জলে অসহ্য যন্ত্রণাকে সে প্রকাশ করে। যন্ত্রণায় কাতর আফ্রিকাবাসীর চাবুকের ক্ষত থেকে নির্গত রক্ত এবং চোখের জল মিশে  সেখানকার ধূলি-বালি যেন পঙ্কিল হয়ে ওঠে। সেই কাদায় ‘দস্যু’দের ‘কাঁটা-মারা জুতোর’ ছাপ পড়ার মধ্যে অত্যাচারের কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে। কবি সেই বেদনাদায়ক ইতিহাসকেই উক্ত পংক্তিগুলির মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।

  • পীড়ন-নিপীড়ন- অত্যাচার।

১১. ‘দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়

                                              বীভৎস কাদার পিন্ড      

চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।।‘  – তাৎপর্য।

উত্তরঃ   সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচারী শক্তির পদপৃষ্ঠে যন্ত্রণায় কাতর আফ্রিকাবাসীর চাবুকের ক্ষত থেকে নির্গত রক্ত এবং চোখের জল মিশে  সেখানকার ধূলি-বালি যেন পঙ্কিল হয়ে ওঠে। সেই কাদায় ‘দস্যু’দের ‘কাঁটা-মারা জুতোর’ ছাপ পড়ার মধ্যে অত্যাচারের কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে। ‘কাঁটা-মারা জুতো’ যুগে যুগে মানুষের উপর দৈহিক আঘাত দিতেই ব্যবহৃত হয়েছে। কবি সেই বেদনাদায়ক ইতিহাসকেই  আমাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।

আফ্রিকাবাসীর স্বাধীন জীবনে হটাৎ নেমে আসে পরাধীনতার খাঁড়া। স্বচ্ছন্দ মুক্ত জীবন শৃঙ্খলের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আফ্রিকাবাসীর জীবনে এই পরাধীনতার গ্লানি ‘অপমানিত ইতিহাস’ রূপে লিখিত হয়। আর সেই লজ্জাজনক ইতিহাসে কলঙ্কের দাগ যেন ‘দস্যু’দের ‘কাঁটা-মারা জুতোর’ ছাপ। মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথের জীবন সম্পর্কে তাঁর মূল্যবোধ ধরা পড়েছে উক্ত পঙ্‌ক্তিগুলির মাধ্যমে।

  • পদপৃষ্ঠ হওয়া- পায়ে চাপা পড়া।
  • পরাধীনতার গ্লানি- পরাধীনতার যন্ত্রণা
  • পরাধীনতার খাঁড়া- পরাধীনতার ফলে যে কষ্ট-যন্ত্রণা বা আঘাত জীবনে নেমে আসে তাকেই ‘পরাধীনতার খাঁড়া’ বলা হয়। ( খাঁড়া = খড়্গ/তলোয়ার )
  • মূল্যবোধ- জীবনে চলার পথে আমরা কিছু নিয়ম -নীতি বা মানদণ্ড স্থির করি,সেগুলিকেই মূল্যবোধ বলা হয়। যেমন, মিথ্যা কথা না বলা, নেশায় আসক্ত না হওয়া ইত্যাদি মুল্যবোধের পরিচয়।

  ১২. ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়

                                        মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা

                       সকালে সন্ধ্যায় দয়াময় দেবতার নামে;

                             শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;

                                                            কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল

                                                                          সুন্দরের আরাধনা।।‘

     উক্ত পঙ্‌ক্তিগুলির তাৎপর্য কী ?

উত্তরঃ  আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে তথাকথিত সভ্য দেশীয় সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা সেখানেও তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে। নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আফ্রিকান অধিবাসীদের উপর তাদের জুলুম সীমা ছাড়িয়ে যায়। ‘কাঁটা-মারা জুতো’ এবং ‘পঙ্কিল হলো ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে’ যেন তাদের অমানবিক অত্যাচারের সাক্ষ্য বহন করে।

একদিকে আফ্রিকার চরম দুর্দিন, অন্যদিকে শাসক শ্রেণির নিজস্ব দেশে নিশ্চিন্ত স্বাভাবিক জীবনের বৈপরীত্যের ছবি কবি পারদর্শীতার সঙ্গে এঁকেছেন। ‘মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা’ বা ‘শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে’ কিংবা কবির গানে ভেসে ওঠা ‘সুন্দরের আরাধনা’ প্রভৃতি ছবি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের ইঙ্গিত করে।  আফ্রিকার বুকে যাদের অত্যাচারে রক্তের স্রোতে জমাট বাঁধে ধূলো, তাদেরই নিজের দেশে তখন আনন্দের পরিবেশ ! একই সময়ে পৃথিবীর দুই ভূ-খন্ডে বিপরীত ছবি ফুটে উঠেছে। এই অন্যায়ের প্রতি কবির দৃষ্টি এড়ায়নি; তাই তো তিনি কলম হাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন।

  • স্বার্থ সিদ্ধি- স্বার্থ পূরণ করার জন্য
  • জুলুম- অত্যাচার করা।
  • অত্যাচারের সাক্ষ্য বহন করে- অত্যাচারের প্রমাণ দেয়।
  • বৈপরীত্যের ছবি- বিপরীত ছবি ( আফ্রিকায় অত্যাচার হচ্ছে আবার যারা অত্যাচার করছে তাদের দেশের মানুষ বেশ আনন্দে আছে )
  • পারদর্শীতার সঙ্গে- দক্ষতার সঙ্গে বা খুব ভালোভাবে।
  • সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের ইঙ্গিত করে- সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের দৃশ্য দেখায়।
  • কলম হাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন- কবি অন্যায় দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি; তাই তিনি কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদী হয়েছেন।

১৩. ‘আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে

প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস’

‘পশ্চিম দিগন্তে প্রদোষকাল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? বাতাস ‘রুদ্ধশ্বাস’ কেনো ?

উত্তরঃ  ‘কাল স্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধন মান’ কবি গুরুরই এই বিখ্যাত পংক্তিটি আমাদের শেখায়, জগতে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সময়ের অভিঘাতে সব কিছুই একদিন না একদিন ধ্বংস হয়। তেমনি আফ্রিকার বুকে যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির একসময় প্রবল প্রতাপ ছিল, শোনা গিয়েছিল আকাশ ভেদী হুঙ্কার; সময়ের স্রোতে আজ তাদের ‘অন্তিম কাল’ এসে গিয়েছে। পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত যায়, ‘ পশ্চিম দিগন্তে প্রদোষকাল ‘ বলতে তাই কবি তাদের শাসনের শেষ সময়কে বোঝাতে চেয়েছেন। 

লড়াই ছাড়া স্বাধীনতা আসে না। আফ্রিকাবাসীদেরও তাদের পায়ের পরাধীনতার শৃঙ্খলকে ছিন্ন করতে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। একদিকে অত্যাচারীর দল আর অন্যদিকে মুক্তিকামী মানুষের দুন্দুভিনিনাদ; এই সংঘর্ষের বাতাবরণকেই কবি ‘ ঝঞ্ঝা বাতাসে রুদ্ধ শ্বাস ‘ বলে উল্লেখ করেছেন।

  • কাল স্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধন মান- সময়ের সঙ্গে আমাদের বয়স বাড়ে, বৃদ্ধ হই, টাকা-পয়সা সব চলে যায়।
  • প্রতাপ- শক্তি বা জোড় ছিল।
  • আকাশ ভেদী হুঙ্কার- খুব গর্জন করা।

১৪. ‘এসো যুগান্তরের কবি’  কবি কেনো যুগান্তরের কবিকে আহ্বান করেছেন ?

উত্তরঃ  এক যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেন যে কবি তাকেই ‘ যুগান্তরের কবি’ বলা হয়। আফ্রিকার মাটিতে আজ যখন সাম্রাজ্যবাদী – অত্যাচারী শাসকদের ‘প্রদোষকাল’ তখন আফ্রিকাবাসিদের কাছে দীর্ঘদিনের নির্যাতন – নিষ্পেষণ থেকে মুক্তির সময়। সেই পুণ্যলগ্নে কবি তাই ‘যুগান্তরের কবি’কে আহ্বান করেছেন। যিনি ‘ওই মানহারা মানবীর দ্বারে’ এসে এতদিন ধরে চলা অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে এক স্বাধীন ও সমৃদ্ধ যুগের সূচনা করবেন। 

  • সূচনা- শুরু করা।
  • প্রদোষকাল- সন্ধ্যার সময়।
  • নিষ্পেষণ করা- পিষে ফেলা। যেমন, গাড়ি চালক পথচারীটিকে পিষে ফেলল।

১৫. ‘দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;

বলো – ‘ক্ষমা করো’ –

‘মানহারা মানবীর দ্বার’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কবি কেনো যুগান্তরের কবিকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন ?

উত্তরঃ   আফ্রিকাবাসী তাদের স্বাধীনতা হারিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী লোভী শক্তির ‘কাঁটা – মারা জুতোর তলায়।’ আফ্রিকার তীরে তথাকথিত সভ্য দের আগমনের পূর্বে সেখানে ছিল অধিবাসীদের নিজস্ব জীবনধারা, সভ্যতা – সংস্কৃতি। তাদের সম্মান ছিল অটুট। কিন্তু যখনই পরাধীনতার শৃঙ্খল হাতে – পায়ে কামড়ে ধরলো তখনই তাদের জীবন ইতিহাসে ফুটে উঠলো কলঙ্কের কালো দাগ। সসম্মানে যারা জীবনযাপন করছিল, তাদের ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হলো। আফ্রিকার এই মর্যাদা হারানোকেই কবি ‘মানহারা মানবীর দ্বার’ বলে বর্ণনা করেছেন।

কবি ‘যুগান্তরের কবি’কে আফ্রিকাবাসীদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। আফ্রিকাবাসী যাদের কাছে ‘মানহারা’ হলো তারাও কিন্তু এই পৃথিবীরই মানব সন্তান। আমরা সবাই মানুষ, তবুও একদল আর একদলের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চায়। আফ্রিকার বুকে যেমন ঔপনিবেশিক শাসকরা স্থানীয় অধিবাসীদের উপর কবজা জমিয়েছিল। কবির মন একদিকে যেমন আফ্রিকাবাসির দুঃখ – যন্ত্রণায় কেঁদেছিল তেমনি তিনি তথাকথিত সভ্যদের অমানুষিকতায় লজ্জিত এবং নতশির হয়েছেন। আমরা মানুষ হয়ে মানুষের আত্মসম্মান হরণ করলাম, কবি তাই তীব্র আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে যুগান্তরের কবির কাছে ‘মান হারা’দের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রার্থনা করেছেন। হিংস্র ঘটনার পরবর্তীতে এই “ক্ষমা” চাওয়াকেই কবি ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ বলেছেন। কবি গুরুর মননের গভীর ভাবধারাকে উন্মোচিত করে উক্ত পঙ্‌ক্তিগুলি।

  • কবিতার ঘটনাটাও ঠিক এমনই; বুঝলে পাগলী – পাগলার দল ??!!
  • কর্তৃত্ব কায়েম- শাসন করা।
  • নতশির- লজ্জায় মাথা নীচু হওয়া।
  • আত্মসম্মান হরণ- নিজের সম্মান কেড়ে নেওয়া। ( আত্ম = নিজের )
  • আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে- আপসোস/অনুশোচনা করতে করতে বুক জ্বলে যাওয়া।
  • কবি মনন- কবির মনের ভাব/চেতনা।
  • উন্মোচিত- প্রকাশ করা।

সবার সঙ্গে শেয়ার করুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a comment