মাধ্যমিকে অসাধারণ রেজাল্ট কে না করতে চায়, সবাই চায়। ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড পরিশ্রম এবং চেষ্টা করে মাধ্যমিকে দুর্দান্ত সাফল্য পেতে। আমরা ‘জীবনযুদ্ধ টিম’ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক প্রস্তুতির সেই পরিশ্রমকে কিছুটা লাঘব করতে কিঞ্চিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখানে বাংলা বিষয়ের সমস্ত পাঠক্রমের প্রশ্ন-উত্তর খুবই উচ্চ মান বজায় রেখে প্রকাশ করছি। ধাপে ধাপে সমস্ত সিলেবাসের বিষয়ই আমরা প্রকাশ করবো। আশা করি আমাদের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ পড়ে অসাধারণ সাফল্য মিলবে।
বাংলা বিষয়ের উত্তর কীভাবে লিখলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যায় তারই কিছু টিপস্ দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণ করো দারুণ উপকৃত হবে।সব সময় কোনো উত্তর লেখার শুরুতেই কোন কবির বা লেখকের কোন কবিতা বা গল্প থেকে প্রশ্নটি এসেছে তা অবশ্যই লিখতে হবে। আমাদের উত্তরগুলোতে সব সময় প্রথমের ওই অংশটি নেই কিন্তু তোমাদের সেটা প্রত্যেক উত্তরেই লিখতে হবে, মনে রেখো।
উত্তরগুলোতে মাঝে মাঝে বাঁকা হরফে কিছু বাক্য দেওয়া আছে। এর অর্থ হলো ওই বাঁকা বাক্যগুলো যে কোনো উত্তরেই ব্যবহার করা যাবে। ওই বাঁকা বাক্যগুলো হলো অলঙ্কারের মতো, উত্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এমন বাক্যগুলি অনেকটাই বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে।
আর, উত্তরের মধ্যে গল্প বা কবিতায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন পঙ্ক্তি/বাক্য ইনভার্টেড কমার ( ‘__’ ) মধ্যে দিতে হবে। এটাও খুব জরুরি।
আমাদের সঙ্গে থাকো ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয়ের উত্তর প্রকাশ করা হবে।
১. “একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান
একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।”
একটা কুকুর চলে গেল কথাটির ব্যঞ্জনা কী ? পঙ্ক্তি দুটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তরঃ কবি পাবলো নেরুদের লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতা থেকে উক্ত পঙ্ক্তি দুটি নেওয়া হয়েছে।
কবিতার প্রিয়তমাকে বাড়িতে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে কবি কর্তব্যের খাতিরে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান। সেই প্রিয়তমা অধীর হয়ে কবির ফেরার অপেক্ষা করতে থাকেন। ‘সে ফিরে আসবে’ এই বিশ্বাসে কবির প্রিয়তমা বেঁচে থাকেন। কিন্তু সময় সর্বদা প্রবাহমান, সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। ‘কুকুর চলে গেল’ এবং ‘হেঁটে গেল গির্জার এক নান’ এই পঙ্ক্তিগুলোর মধ্য দিয়ে কবি সময়ের সেই চিরন্তন গতিকেই বুঝিয়েছেন। সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে একটা সপ্তাহ, একটা বছর এভাবেই কেটে যায়। কবির অসাধারণ কবিত্ব প্রতিভার পরিচয় পঙ্ক্তিগুলোর মাধ্যমে পাওয়া যায়।
- অধীর হয়ে- ব্যাকুল হয়ে।
- প্রবাহমান- থেমে থাকে না এমন।
২. ‘বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ
ঘাস জন্মালো রাস্তায়’ তাৎপর্য।
উত্তরঃ মনের মধ্যে অবস্থিত আমাদের স্মৃতিগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্ণ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন যদি পরিচিত কারো সঙ্গে যোগাযোগ না থাকে তাহলে ধীরে ধীরে তার স্মৃতি মন থেকে মুছে যেতে থাকে। এটি একটি শাশ্বত সত্য।
কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়জনকে বাড়িতে রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান। বছরের পর বছর কবির পথ চেয়ে কবির প্রিয় মানুষটি অপেক্ষা করতে থাকে। সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে তাঁর প্রিয়তমার হৃদয়ে কবির সেই মধুর স্মৃতি ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। এখানে মাটি যেন মনের আধার; আর মাটিতে পরা পায়ের দাগ হল মনের স্মৃতি। বৃষ্টি হল সময়ের স্বাভাবিক গতি। ‘ঘাস জন্মালো’ সেই পায়ের দাগে অথাৎ মনের জমানো স্মৃতি আবছা হয়ে পড়ল। জীবন বোধের অসাধারণ একটি দিক কবি এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি যে মানব মনের গতিবিধি সম্পর্কে অগাধ জ্ঞানী ছিলেন সেটা তার এই লেখায় ফুটে উঠেছে।
- বিবর্ণ হওয়া- ফ্যাকাশে / আবছা হওয়া।
- শাশ্বত সত্য- চির সত্য, যেমন সূর্য পূর্বদিকে উঠে।
- মনের আধার- আধার কথাটির অর্থ পাত্র (কাচের পাত্র), এখানে মাটিকে মন বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।
- অগাধ- অনেক।
৩. ‘আর একটার পর একটা, পাথরের মতো
পর পর পাথরের মতো, বছরগুলো’ তাৎপর্য।
উত্তরঃ সাহিত্যে ‘পাথর’কে হৃদয়হীন এবং কঠোর ভাবা হয়। পাথরের নির্মম আঘাত শারীরিক এবং মানসিকভাবে যন্ত্রণা দেয়। তেমনি আমরা যখন কোনও প্রিয়জনের জন্য অনন্ত অপেক্ষা করতে থাকি তখন অপেক্ষারত ওই মুহূর্তগুলি যেন কিছুতেই শেষ হতে চায় না। অপেক্ষার ওই সময় মনের মধ্যে তীব্র ব্যাকুলতা সৃষ্টি করে। পাথরের মতোই অপেক্ষার সেই সময় মনকে ভীষণভাবে পীড়া দেয়। অপেক্ষারত বছরগুলো পাথরের মতোই কঠোর ও কঠিন বলে কবি উভয়ের সাদৃশ্য কল্পনা করেছেন।
- মানসিকভাবে যন্ত্রণা- মনকে কষ্ট দেয়।
- অনন্ত- শেষ হয় না এমন।
- পীড়া- কষ্ট দেওয়া।
৪. ‘তারপর যুদ্ধ এল
রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো।‘ তাৎপর্য।
উত্তরঃ আগ্নেয়পাহাড় থেকে নিঃসৃত উত্তপ্ত লাভা চারপাশের সমস্ত কিছুকে পুড়ে ছারখার করে দেয়। আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধের ফলেও ব্যাপক ধ্বংসলীলা ঘটে। হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধের কবলে পড়ে প্রাণ হারান। যুদ্ধের প্রচন্ড আঘাতে চারদিকে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। যুদ্ধের ভয়াল-বিধ্বংসী রূপ আগ্নেয়পাহাড়ের মতোই প্রাণঘাতী বলে কবি যুদ্ধকে ‘রক্তের আগ্নেয়পাহাড়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
- ছারখার- তছনছ করে দেওয়া।
- ভয়াল-বিধ্বংসী রূপ- ভয় ধরায় এমন ভয়ংকর রূপ।
- প্রণঘাতী- প্রাণ কেড়ে নেয় এমন।
৫. ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।‘ মেয়েটির কেন মৃত্যু হলো না ? তাৎপর্য।
উত্তরঃ ‘মেয়েটি’ হল মানুষের চিরন্তন আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল, হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও সে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখে। মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রেখে কবি মানুষের সেই আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছেন।
কবিতায় দেখা যায়, যুদ্ধ বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে চারদিকে রক্তের স্রোত। যুদ্ধের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র ছিল যে, সৈনিকদের পাশাপাশি ‘শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।‘ বাড়ি-ঘর ‘সব চূর্ণ হয়ে গেল।‘ এমনকি যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে দেবতারাও রক্ষা পায়নি, তাঁরা ‘উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে।‘ এমনই এক চরম সামাজিক অবক্ষয়ের সময়ে দাঁড়িয়ে মানুষের বাঁচার আশা প্রায় কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু তবুও মানুষ হার স্বীকার করে না। আবার উঠে দাঁড়িয়ে নতুন করে ঘরবাঁধার স্বপ্নে বিভোর হয়। ‘জীবন্ত মেয়েটি’ যেন মানুষের আশার তরীর পালে দমকা হাওয়া।
- চিরন্তন- সর্বদা বা সব সময়ের।
- স্বাভাবিক প্রবৃত্তি- স্বাভাবিক স্বভাব বা আচরণ।
- জিইয়ে রাখা- বাঁচিয়ে রাখা।
- যুদ্ধের করাল গ্রাস- যুদ্ধের আঘাত।
- সামাজিক অবক্ষয়ের সময়ে- সমাজ ধ্বংসের মুখে।
- অবশিষ্ট- বাকি থাকে না।
- স্বপ্নে বিভোর হয়- স্বপ্ন দেখে।
- আশার তরীর পালে দমকা হাওয়া- মানুষের আশার নৌকার পালে দমকা হাওয়া দেওয়া বলতে, মানুষের আশাকে বাঁচিয়ে রাখা বঝানো হয়েছে।
৬. ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।‘
কারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না ? কেন ? (তাৎপর্য)
উত্তরঃ বিধ্বংসী যুদ্ধের কবলে মানব জীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’ যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। বাড়ি-ঘর ‘সব চূর্ণ হয়ে’ চারদিক শ্মশানে পরিণত হয়েছে। এমনকি শিশুরাও যুদ্ধের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি।
সমাজ জীববনের এই চরম অরাজগতার দিনে যেখানে মানুষ প্রতিনিয়তই প্রাণ হারাচ্ছেন সেখানে দেবতারা কী সুরক্ষিত থাকতে পারে ? না, দেবতারাও যুদ্ধের আঘাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। যুদ্ধের আগুনে তাঁরাও ‘উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে।’ মন্দিরে তাঁরা হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন ছিল। এই পৃথিবীর মানুষকেই নিয়েই তাঁদের স্বপ্ন। মানুষের নিয়তি রচনাতেই তাঁরা যেন ধ্যানে মগ্ন থাকেন। কিন্তু যুদ্ধের কঠিন আঘাতে তাঁরাও আজ ভূপতিত। ফলে তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেল। মানুষের পালক হিসাবে দেবতাদের স্থান। সেখানে বিগ্রহে তাঁদের নিষ্ক্রিয় অবস্থানের প্রতি কবির গলায় কিছুটা কটাক্ষের সুর শোনা যায়।
- যুদ্ধের কবলে পড়া- যুদ্ধের আঘাতে পড়া।
- বিপর্যস্ত- ধ্বংস।
- অরাজগতার দিনে- দুর্দিনে বা খারাপ সময়ে।
- ভূপতিত- মাটিতে পড়ে গোড়াগোড়ি খাওয়া।
- বিগ্রহ- দেবতার মন্দির।
৭. ‘রক্তের একটা কালো দাগ।‘ পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতোই ‘রক্তের একটা কালো দাগ’ এই ছোট্ট পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে কবি একটি বৃহৎ করুণ চিত্রকে আমাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
কয়েকদিনের জমাটবাঁধা রক্তে কালো দাগ পড়ে যায়। সেই রক্তের দাগের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে যুদ্ধের কবলে পড়া হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর করুণ কাহিনি। ‘রক্তের কালো দাগ’ দেখেই বোঝা যায় সমাজ জীবনে একটা বিধ্বংসী হত্যালীলা ঘটেছে। কবিতায় দেখা যায় যুদ্ধের করাল গ্রাসে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান। যুদ্ধের আঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে শিশুরা এমনকি দেবতারাও রক্ষা পায়নি। যুদ্ধের পরিণতি সমাজের বুকে যে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’ ভয়ংকর ছিল সেই বীভৎস ঘটনাটিই কবি উক্ত পঙ্ক্তির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন।
- করুণ কাহিনি- মনে দুঃখ বা ব্যথা দেয় এমন কাহিনি।