অনেক মেধাবী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রী রয়েছেন যারা কেবলমাত্র আর্থিক অভাব অনটনের কারণে জীবনে বড়ো হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারেন না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক রেজাল্ট বেরোলেই শোনা যায় অনেক দুঃস্থ-দরিদ্র পরিবারের সন্তান চমকপ্রদ ফলাফল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। মেডিক্যাল, ম্যানেজমেন্ট, আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্য কোনো পেশাদার কোর্স যেখানে পড়াশোনার খরচ অনেকটাই বেশি, সেই কোর্সগুলিতে মেধা ও যোগ্যতা থাকার সত্ত্বেও বহু ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে পারেন না। ফলে অচিরেই বিনষ্ট হয় বৃহৎ একটি সম্ভাবনা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় বললে ‘মানব সম্পদের অপচয়’ ঘটে। যা আখেরে সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দুঃস্থ এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিজের পছন্দমত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন সেজন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় পড়ুয়ারা পড়াশোনার খাতে যে খরচ হবে তা ঋণ (Loan) হিসেবে পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। এই ঋণের গ্যারেন্টার (Guarantor) হিসাবে থাকবে রাজ্য সরকার এবং কোনরকম প্রসেসিং ফি কাটা হবে না। ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ কীভাবে বানাতে হবে, এই কার্ডের কী কী সুবিধা রয়েছে বা ঋণ পরিশোধের জন্য সময়সীমা কত ইত্যাদি সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় আজকে আমরা জানবো এই প্রতিবেদনে।
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড কী ?
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড হলো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অধীনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ কার্ড। এই কার্ড প্রাপকরা পড়াশোনার জন্য খুবই অল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি লোন নিতে পারবেন। মূলত আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনা করেই রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে।
আরও পড়ুন- What Is BCA Course ? পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য জানুন এই কোর্স সম্পর্কে
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
- আবেদনকারী পড়ুয়া বা পরিবারকে অন্তত ১০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত এই কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে।
- কোনো স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন এমন পড়ুয়ারা এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। মাধ্যমিক থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তরে (MA) পাঠরত সকল পড়ুয়া এই ঋণের জন্য আবেদনযোগ্য। এমনকি স্নাতকোত্তর পরবর্তী বিভিন্ন গবেষণা ধর্মী পড়াশোনা, যেমন পিএইচডি (P.hD) এর ক্ষেত্রেও স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ মিলবে।
- NEET, JEE, UPSC, PSC, SSC এইসব পরীক্ষার প্রস্তুতি কোনো বেসরকারি কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করতে হবে। তাহলেও এই প্রকল্পের অধীনে লোন পাওয়া যাবে।
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড কীভাবে বানাবো ?
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন জমা করতে হবে। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও আবেদনের লিঙ্ক নিচে দেওয়া রয়েছে। অনলাইনে ফর্ম পূরণের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলি PDF আকারে আপলোড করতে হবে।
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড করতে কি কি লাগে
- আবেদনকারী পড়ুয়ার আধার কার্ড। আধার কার্ড না থাকলে মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
- পড়ুয়ার পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি ও স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি।
- সহ আবেদনকারী/ সহ ঋণগ্রহীতার রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- পড়ুয়ার প্যান কার্ড, না থাকলে Undertaking অপশন বাছতে হবে।
- অভিভাবকের প্যান কার্ড, না থাকলে আন্ডারটেকিং অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- সহ ঋণগ্রহীতার/অভিভাবকের স্বাক্ষর।
- অভিভাবকের বাসস্থানের শংসাপত্র (Address Proof)
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির রসিদ।
- কোর্স ফি ও টিউশন ফি এর প্রমাণপত্র। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের Brochure বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট যেখানে কোর্স ও টিউশন ফি উল্লেখ করা রয়েছে, সেটি আপলোড করতে হবে।
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড সুবিধা
- স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কোর্স ফি বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। কোনো কোর্স ফি যদি ১ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে সেই টাকা পড়ুয়াকে একবারে খরচ করতে হবে না। তিনি ব্যাঙ্ক থেকে পড়াশোনার খরচ বাবদ এক লক্ষ টাকা লোন পাবেন তারপর ধীরে ধীরে সেই লোন তাকে পরিশোধ করতে হবে।
- সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে।
- স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে ঋণ নেওয়া হবে তার সুদের পরিমাণ মাত্র ৪ শতাংশ।
- এই কার্ডের মাধ্যমে নেওয়ার ঋণ পরিশোধের জন্য পড়ুয়ারা ১৫ বছর সময়সীমা পাবেন। সময়ের আগে লোন পরিশোধ করলে কোনো পেনাল্টি চার্জ লাগবে না। এছাড়াও স্টুডেন্ট লোনের জন্য কোনো প্রসেসিং ফিও ধার্য করা হয় না।
- শুধু দেশেরই নয় বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ পাওয়া যাবে।
হেল্প লাইন যোগাযোগ
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান বা সাহায্যের জন্য হেল্প লাইন নম্বর ও ইমেল আইডি রয়েছে।
হেল্প ডেস্ক নম্বর: 18001028014
ইমেল আইডি:
support-wbscc@bangla.gov.in
contactwbscc@gmail.com
কিছু আনুষঙ্গিক জিজ্ঞাসা: FAQ
Q. স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড কবে চালু হয় ?
ANS: ৩০ জুন ২০২১ সালে এই প্রকল্প চালু করা হয়।
Q. স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড এর জন্য পরিবারের সর্বোচ্চ বার্ষিক আয় কত ?
ANS: স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পেতে গেলে পারিবারিক আয়ের ঊর্ধ্বসীমা কত থাকতে হবে সে নিয়ে কোনো নির্দেশিকা রাজ্য সরকার থেকে দেওয়া হয়নি।
Q. এই প্রকল্পের জন্য আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা কী ?
ANS: পশ্চিমবঙ্গের কোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে নবম শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। তারপর মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশেবিদ্যালয় স্তরের পড়াশোনার ক্ষেত্রে এই কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে।
Q. থাকা-খাওয়ার খরচ কী এই লোনের টাকা থেকে দেওয়া যাবে ?
ANS: হ্যাঁ দেওয়া যাবে। লোনের টাকার মোট পরিমাণের ২০ শতাংশ থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যয় করা যাবে। এছাড়াও যাতায়াত খরচ, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ইত্যাদি পড়াশোনার আনুষঙ্গিক খরচ লোনের টাকার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা যাবে। এই ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকা-খাওয়ার খরচও ধরা হবে।
Q. স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কোর্স ফি কীভাবে দিতে হবে ?
ANS: ব্যাঙ্ক থেকে সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোর্স ফি এর টাকা জমা করা হবে।
Q. বাড়ি ভাড়া, খাওয়ার খরচের টাকা এইসব আনুষঙ্গিক খরচের টাকা কীভাবে মেটাতে হবে ?
ANS: মোট লোনের কিছুটা অংশ পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে, সেই টাকা পড়াশোনার আনুষঙ্গিক খরচে ব্যয় করা যাবে।
প্রয়োজনীয় লিঙ্ক
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Click Here |
অফিসিয়াল তথ্য | Download |
আবেদন পদ্ধতির গাইড লাইন | Download |
আবেদন লিঙ্ক | Apply Now |
আরও পড়ুন- Yogyashree Scheme: যোগ্যশ্রী প্রকল্প এর মাধ্যমে ফ্রিতে চাকরির ট্রেনিং দিবে সরকার
আরও পড়ুন- কার্টুন বানানো শিখুন খুব কম খরচে, স্বনামধন্য সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে
আরও পড়ুন- পোস্ট অফিস রিক্রুটমেন্ট: গ্রামীণ ডাক সেবক নিয়োগ 2024, শূন্যপদ ৪৫ হাজার