মাধ্যমিকে অসাধারণ রেজাল্ট কে না করতে চায়, সবাই চায়। ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড পরিশ্রম এবং চেষ্টা করে মাধ্যমিকে দুর্দান্ত সাফল্য পেতে। আমরা ‘জীবনযুদ্ধ টিম’ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক প্রস্তুতির সেই পরিশ্রমকে কিছুটা লাঘব করতে কিঞ্চিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখানে বাংলা বিষয়ের সমস্ত পাঠক্রমের প্রশ্ন-উত্তর খুবই উচ্চ মান বজায় রেখে প্রকাশ করছি। ধাপে ধাপে সমস্ত সিলেবাসের বিষয়ই আমরা প্রকাশ করবো। আশা করি আমাদের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ পড়ে অসাধারণ সাফল্য মিলবে।
বাংলা বিষয়ের উত্তর কীভাবে লিখলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যায় তারই কিছু টিপস্ দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণ করো দারুণ উপকৃত হবে।সব সময় কোনো উত্তর লেখার শুরুতেই কোন কবির বা লেখকের কোন কবিতা বা গল্প থেকে প্রশ্নটি এসেছে তা অবশ্যই লিখতে হবে। আমাদের উত্তরগুলোতে সব সময় প্রথমের ওই অংশটি নেই কিন্তু তোমাদের সেটা প্রত্যেক উত্তরেই লিখতে হবে, মনে রেখো।
উত্তরগুলোতে মাঝে মাঝে বাঁকা হরফে কিছু বাক্য দেওয়া আছে। এর অর্থ হলো ওই বাঁকা বাক্যগুলো যে কোনো উত্তরেই ব্যবহার করা যাবে। ওই বাঁকা বাক্যগুলো হলো অলঙ্কারের মতো, উত্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এমন বাক্যগুলি অনেকটাই বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে।
আর, উত্তরের মধ্যে গল্প বা কবিতায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন পঙ্ক্তি/বাক্য ইনভার্টেড কমার ( ‘__’ ) মধ্যে দিতে হবে। এটাও খুব জরুরি।
আমাদের সঙ্গে থাকো ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয়ের উত্তর প্রকাশ করা হবে
১ প্রশ্নঃ অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে
আমি এখন হাজার হাতে পায়ে
এগিয়ে আসি” কবি অস্ত্র কেন ফেলতে বলেছেন ? ‘হাজার হাতে পায়ে’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন ? (তাৎপর্য)
উত্তরঃ মানব সভ্যতায় অস্ত্রের উপকারিতার থেকে ক্ষতিকারক প্রভাবই বেশি দেখা যায়। ইতিহাসের পাতায় এই সর্বাঙ্গীণ সুন্দর পৃথিবীতে অস্ত্রের আঘাতেই বহুবার মানুষের ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায়। কত যে রাজা, সম্রাট, সাম্রাজ্যবাদী শাসক শক্তি অস্ত্রের ক্ষমতায় শক্তিশালী হয়ে মানুষের উপর অত্যাচার করেছে তার হিসেব নেই। কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের ধংসাত্মক রূপটি প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই তো “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় তাঁর অস্ত্রের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে।
এখানে “হাজার হাতে পায়ে” বলতে কবি বহু মানুষের সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদী হওয়ার কথা বলেছেন। অস্ত্রের আঘাতে মানুষ আহত হয়, নুইয়ে পড়ে তার সমস্ত দেহ-মন। কিন্তু ক্রমাগত আঘাতে যখন মানুষের সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে যায় তখন মানুষ প্রতিবাদী হয়ে গর্জে উঠে। পঙ্ক্তি দুটিতে “আমি” হলেন কবি নিজেই, তিনি যেন হাজার হাজার মানুষের প্রতিনিধি হয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। অস্ত্র যে মানব সভ্যতার জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক সেটা উপলব্ধি করেই কবি আমাদের অস্ত্র ত্যাগ করতে বলেছেন। পঙ্ক্তিগুলির মাধ্যমে কবির হিংসা পরিত্যাগ করে সুন্দর-সুকোমল বাসযোগ্য এক মানবসভ্যতা নির্মাণের আকাঙ্খা প্রকাশ পেয়েছে।
- সর্বাঙ্গীণ সুন্দর- সব অঙ্গ সুন্দর যার। কোনও খুঁত নেই, নিখুঁত সুন্দর।
- সাম্রাজ্যবাদী শাসক শক্তি- যারা কোন জায়গা দখল করে রাজত্ব করতে চায় তাদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বলে। যেমন, মুঘল, ইংরেজ, পাঠান ইত্যাদি।
- প্রত্যক্ষ করা- কোন কিছু দেখে সেটার অর্থ অন্তর থেকে বুঝতে পারা বা মর্মার্থ বোঝা।
- বিরূপ মনোভাব- মনের বিতৃষ্ণা।
- প্রতিনিধি- যখন অনেক ব্যক্তির মধ্যে একজন বা কয়েকজনকে নির্বাচন করা হয় তখন ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে প্রতিনিধি বলা হয়। যেমন- স্কুলে সরস্বতী পূজার দায়িত্ব ক্লাস নাইনকে দেওয়া হবে। কীভাবে পূজার আয়োজন সুষ্ঠুভাবে করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রধান শিক্ষক ক্লাস নাইনের পাঁচজন ছাত্রছাত্রীকে অফিসে ডেকে পাঠালেন। ওই পাঁচজন ছেলেমেয়েই হল গোটা ক্লাসের প্রতিনিধি।
- নুইয়ে পড়া- হেলে পড়া বা ঝুঁকে পড়া।
২ প্রশ্নঃ “হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই
গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে” তাৎপর্য।
উত্তরঃ মানব সভ্যতায় অস্ত্রের উপকারিতার থেকে ক্ষতিকারক প্রভাবই বেশি দেখা যায়। ইতিহাসের পাতায় এই সর্বাঙ্গীণ সুন্দর পৃথিবীতে অস্ত্রের আঘাতেই বহুবার মানুষের ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায়। কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের ধংসাত্মক রূপটি প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই তো “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় তাঁর অস্ত্রের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে কবি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হাজার হাজার মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখ যেন কবি। হাজার মানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তি যে ঘাতক বুলেটের থেকেও বেশি শক্তিশালী সেটা বোঝাতেই কবি “হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই” কথাটি বলেছেন। শুধু ‘বুলেট তাড়িয়েই’ তিনি ক্ষান্ত হননি, অস্ত্রকে প্রতিহত করতে গায়ে চাপিয়েছেন ‘গানের বর্ম’। অস্ত্রের বিনাশী শক্তিকে নাশ করতেই ‘গানের বর্ম’কে কবি ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। অস্ত্র যারা হাতে তুলে নিয়ে দমন-পীড়নে মত্ত হয়েছে তাদের মনকে তিনি মানবতা এবং ভালোবাসার গানের মিষ্টি সুরে জয় করতে চান।
- সম্মিলিত- একত্রিত বা একসঙ্গে।
- ক্ষান্ত হননি- থেমে থাকেননি।
- প্রতিহত করা- আটকানো।
- গানের বর্ম- বর্ম শব্দের অর্থ কবজ। আগেকার দিনে তরবারির আঘাত থেকে রক্ষা পেতে সৈন্যরা ধাতুর তৈরি এক ধরনের পোশাক পড়ত। রক্ষা কবজ হিসাবে বর্মকে ব্যবহার করা হত। তেমনি কবিতায় কবি অস্ত্রের কুপ্রভাবকে থামাতে গানের বর্ম পরেছেন। অর্থাৎ মানবতার গান, ভালোবাসার গান গেয়ে কবি মানুষকে অস্ত্র বর্জন করে হিংসাকে ত্যাগ করতে বলেছেন। বর্ম দেখতে: Click Here
- মানবতা ও ভালোবাসার গান- যে গান হিংসা-নিন্দা ত্যাগ করে মানুষে মানুষে মিলেমিশে থাকার কথা বলে।
৩ প্রশ্নঃ “গান তো জানি একটা দুটো
আঁকড়ে ধরে সে–খড়কুটো” তাৎপর্য।
উত্তরঃ “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছেন। মানুষই এই পৃথিবীর বুকে সুস্থ-সুন্দর সভ্যতাকে গড়ে তুলেছে। আবার মানুষই অস্ত্র হাতে নিয়ে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠে এবং অস্ত্রের আঘাত হেনে মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অস্ত্রের বিনাশী শক্তিকে প্রতিহত করতেই কবি তাই ‘গান’কে ঢাল রূপে বেছে নিয়েছেন। প্রবল আগ্রাসী অস্ত্রের বিরুদ্ধে জয় লাভ করতে তাঁর ভরসা ওই ‘একটা দুটো’ গান। জলে ডুবন্ত ব্যক্তি যেমন খড়কুটো অবলম্বন করে ভেসে থাকায় মরিয়া চেষ্টা চালায় তেমনি কবিও দু’একটা গান আঁকড়ে ধরেই ‘শক্তিমান’ অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান। এখানে গান বলতে কবি মানবতার গান, ভালোবাসার গানের কথা বলেছেন। যেই গানের সুরে মানুষ অস্ত্র ত্যাগ করে পরস্পর মিলেমিশে থাকার প্রেরণা পাবে বলে কবির বিশ্বাস। অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে গানকে কবি বিপরীত শক্তি রূপে কল্পনা করেছেন।
- প্রতিহত করা- আটকানো, থামানো।
- বিপরীত শক্তি- গান এমন একটা শক্তি যা অস্ত্রের শক্তিকে নষ্ট করতে পারে। সাপ কামড় দিলে যেমন অ্যান্টি ডোজ দিতে হয় তেমনি অস্ত্রের কুপ্রভাবকে আটকাতে অ্যান্টি ডোজ হিসাবে কবি গানকে নিয়েছেন।
৪ প্রশ্নঃ “রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে
মাথায় কত শকুন বা চিল” তাৎপর্য।
উত্তরঃ কবি অস্ত্রের মারণ কামড় প্রতিহত করতে গায়ে চাপিয়েছেন ‘গানের বর্ম’। অস্ত্রের বিনাশী শক্তিকে নাশ করতেই ‘গানের বর্ম’কে তিনি ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। অস্ত্র যারা হাতে তুলে নিয়ে দমন-পীড়নে মত্ত হয়েছে তাদের মনকে তিনি গানের মিষ্টি সুরে জয় করতে চান। ‘রক্ত মুছি’ বলতে তিনি অস্ত্রের নৃশংসতাকে গানের মাধ্যমে আটকাতে চান। তাঁর বিশ্বাস গানই হল অস্ত্রকে দমন করার এক উত্তম পন্থা।
‘শকুন বা চিল’কে কবি এখানে এক বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেছেন। সামাজিক শোষণ, নির্যাতন চালায় যারা সেই সমস্ত বদমাইশ লোকদের কবি ‘শকুন বা চিল’ বলেছেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, সন্ত্রাসবাদী বা গুণ্ডা-বদমাশদের দৌরাত্ম্যে সমাজ জীবনে নেমে এসেছে চরম সামাজিক অবক্ষয়। দুর্বৃত্তরা অস্ত্র হাতে নিয়ে মানব সভ্যতার বুকে ক্রমাগত আঘাত হানছে। যে ভাবে ’শকুন বা চিল’ ভাগাড়ের উপর উড়ে বেড়ায়। তাই সমাজের দুষ্টু লোকদের কবি ‘শকুনবা চিল’ এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। দুর্বৃত্ত লোকেরাই সসাধারণ মানুষকে শোষক করে রক্ত চুষে নেয়। কবি এই সমস্ত নোংরামির বিরুদ্ধে ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গর্জে উঠেছেন।
- নৃশংসতা- ভয়ংকরতা, নিষ্ঠুরতা।
- উত্তম- ভালো।
- পন্থা- উপায়, মাধ্যম, অবলম্বন।
- দৌরাত্ম্য- অত্যাচার। যেমন- ছেলে ধরাদের দৌরাত্ম্যে এখন রাত্রে বাড়ি থেকে বেরনই মুশকিল হয়ে পড়েছে।
- সামাজিক অবক্ষয়- সমাজ ব্যবস্থা নষ্ট হওয়া বোঝায়। যেমন- যুদ্ধের ফলে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে।
- দুর্বৃত্ত- শয়তান। খারাপ লোক।
- ভাগাড়- যেখানে মরা জীব-জন্তুর মৃতদেহ ফেলা হয়।
৫ প্রশ্নঃ “আমার শুধু একটা কোকিল” তাৎপর্য।
উত্তরঃ কবি অস্ত্রের মারণ কামড় প্রতিহত করতে গায়ে চাপিয়েছেন ‘গানের বর্ম’। অস্ত্রের বিনাশী শক্তিকে নাশ করতেই ‘গানের বর্ম’কে তিনি ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। অস্ত্র যারা হাতে তুলে নিয়ে দমন-পীড়নে মত্ত হয়েছে তাদের মনকে তিনি গানের মিষ্টি সুরে জয় করতে চান। ‘রক্ত মুছি’ বলতে তিনি অস্ত্রের নৃশংসতাকে গানের মাধ্যমে আটকাতে চান। তাঁর বিশ্বাস গানই হল অস্ত্রকে দমন করার এক উত্তম পন্থা।
আর এই গান গাওয়ার জন্য কবি বেছে নিয়েছেন ‘একটা কোকিল’। যার গান শোনে অস্ত্রধারীদের পাষাণ হৃদয়ও গলে নরম হয়ে উঠবে। যে বুকে জ্বলত বিদ্বেষ, প্রতিশোধের আগুন সেই বুকে উঠবে ভালোবাসা, মায়া-মমতার কোমল ঢেউ। গানই যে অস্ত্রের বিরুদ্ধে কবির প্রধান হাতিয়ার তারই প্রতীকী যেন এই ‘একটা কোকিল’। কবি জয় গোস্বামীর কবিত্ব প্রতিভা যে উচ্চ স্তরের ছিল তারই প্রমাণ উক্ত পঙ্ক্তিটি।
- প্রতীকী- কোকিল গান করে। ‘কোকিল’ পাখির কথা বলে কবি আসলে গানের কথাই বলেছেন। এভাবে কোনও কিছুকে ঘুরিয়ে বলাকেই প্রতীকীর সাহায্যে বলা বোঝায়। আবার যেমন- ‘মানুষ কাস্তে হাতে তুলে নিয়েছেন।‘ এখানে কাস্তে হল সাধারণ মানুষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মূল হাতিয়ার/অস্ত্র। কাস্তে এখানে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের অস্ত্রের প্রতীকী।
৬ প্রশ্নঃ “বর্ম খুলে দ্যাখো আদুড় গায়ে
গান দাঁড়াল ঋষিবালক” তাৎপর্য।
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী বা যুদ্ধবাজ শাসক গোষ্ঠী অস্ত্রের দ্বারা বলীয়ান হয়ে সমাজকে এক চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেয়। তাদের ছোড়া অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় সাধারণ মানুষ। ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার, বিদ্বেষভাব কিংবা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে তারা উন্মত্ত হয়ে উঠে। মনুষ্যত্ববোধের কোমল হৃদয় ঢেকে যায় অস্ত্রের বারুদের কালো ধোঁয়ায়। অস্ত্রের কুপ্রভাবে মন কুলুষিত হইয়ে উঠে, কবি সেই কুপ্রভাব থেকে বেরিয়ে আসাটাকেই ‘বর্ম খুলো’ বলেছেন। ভালো মানুষ হয়ে উঠার জন্যই কবি তাদের সেই বর্ম খুলে ফেলতে বলেছেন। সেই বর্মের নীচে চাপা পড়ে আছে আদুড়ে শরীর। সেই শরীরে এখনও জীবন্ত রয়েছে মানব প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মায়া-মমতার মতো সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো।
মানব প্রেমের গানকে কবি এখানে ‘ঋষিবালক’ এর মতো স্নিগ্ধ-সুন্দর-পবিত্র বলে কল্পনা করেছেন। ঋষিবালক নিষ্কলঙ্ক, সুন্দর-কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তার ছোঁয়ায় মানুষের মধ্যে হিংসা, নিন্দা দূরীভূত হয়ে প্রেমভাব জাগ্রত হয়। মানুষ যখন ক্ষমতা, অহংকারের বর্ম খুলে ফেলে তখন গান তার কাছে ঋষিবালকের মতো নিষ্পাপ, পবিত্র রূপে ধরা দেয়। সেই গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে অস্ত্র ত্যাগ করে এবং মানুষে মানুষে প্রেম-ভালোবাসা জাগরণের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় ব্রতী হয়।
- দম্ভ- অহংকার।
- উন্মত্ত হওয়া- ক্ষমতা পেয়ে নিজেকে বিরাট ভেবে অহংকারে বুক ফুলিয়ে বেড়ান।
- মনুষ্যত্ববোধ- মানুষের মধ্যে মায়া-মমতা-ভালোবাসা-দরদ ইত্যাদি থাকলে, তার মনুষ্যত্ববোধ আছে বলা হয়। যেমন- রাস্তার কুকুরের গায়ে যারা গরম জল ঢালে তাদের মনুষ্যত্ববোধ নেই।
- সুকুমার প্রবৃত্তি- মায়া-মমতা-ভালোবাসা কিংবা ছবি আঁকা, গান গাওয়া ইত্যাদি যে গুণগুলো আমাদের ভালো মানুষ তৈরি করে, সেগুলিকে সুকুমার প্রবৃত্তি বলে।
- শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় ব্রতী হয়- শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে।
৭ প্রশ্নঃ “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান
নদীতে, দেশগাঁয়ে” তাৎপর্য।
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী বা যুদ্ধবাজ শাসক গোষ্ঠী অস্ত্রের দ্বারা বলীয়ান হয়ে সমাজকে এক চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেয়। তাদের ছোড়া অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় সাধারণ মানুষ। ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার, বিদ্বেষভাব কিংবা প্রতিশোধের বর্ম পরে তারা উন্মত্ত হয়ে উঠে। মনুষ্যত্ববোধের কোমল হৃদয় ঢেকে যায় অস্ত্রের বারুদের কালো ধোঁয়ায়। কবি তাই তাদের সেই বর্ম খুলে ফেলতে বলেছেন। সেই বর্মের নীচে চাপা পড়ে আছে আদুড়ে শরীর। সেই শরীরে এখনও জীবন্ত রয়েছে মানব প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মায়া-মমতার মতো সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো।
অস্ত্র ধারণের ফলে মানুষের মনে হিংসাত্মক ভাবের সৃষ্টি হলেও মনুষ্যত্বের গান, ভালোবাসার গান মনে মধ্যে দূষিত চিন্তাধারার দূরে সরিয়ে দেয়। তার পরিবর্তে মনে জাগায় মানব প্রেম, সৌন্দর্য চেতনা। মনের পরিশুদ্ধি ঘটলে আমরা সৌন্দর্যের পিপাসী হয়ে উঠি। তখন নদীর ধার বা পাড়াগাঁয়ের মেঠো পথের অকৃত্রিম নির্মল সৌন্দর্য আমাদেরকে প্রলুব্ধ করে। কবির ভাষার গানের হাত ধরেই আমরা পল্লীবাংলার মুগ্ধকর প্রাকৃতিক রূপ-রসকে আস্বাদন করতে পারি।
মনের হিংসাত্মক ভাব- মানুষকে হত্যা করা, মারধর করা, যুদ্ধ করার মানসিকতা ইত্যাদি হিংসাত্মক মনের ভাব।
সৌন্দর্য চেতনা- মন যখন ভালো থাকে তখন সুন্দর জিনিসের প্রতি আমাদের দৃষ্টি যায়। সৌন্দর্যের প্রতি মনের আকর্ষণ জন্মে। একেই সৌন্দর্য চেতনা বলা যায়।
সৌন্দর্যের পিপাসী- মন যখন কোনও সুন্দর জিনিস দেখতে বা অনুভব করতে চায় তখন আমরা সৌন্দর্যের পিপাসী হয়ে উঠি বলা হয়।
মেঠো পথ- গ্রামের কাঁচা রাস্তা।
নির্মল সৌন্দর্য- খুব সুন্দর।
প্রলুব্ধ করা- মনকে আকৃষ্ট করা।
আস্বাদন করা- স্বাদ গ্রহণ করা। কিন্তু এখানে প্রাকৃতিক রূপ-রসকে অনুভব করা বোঝাচ্ছে।