একাদশ শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এবারেই প্রথম সেমিস্টার ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হবে। ‘বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি’ বইটি সবেমাত্র ছাত্রছাত্রীরা হাতে পেয়েছে। এই গ্রন্থটি পর্ষদের তরফে বিনামূল্য ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়। বইটি এতো দেরি করে প্রকাশের পিছনে দায়ী পর্ষদ নিজেই। এদিকে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রায় ঘনিয়ে এলো। এমতাবস্থায় সঙ্গত কারণে মনে করাই যায় যে, সম্ভবত প্রথম সেমিস্টারের প্রশ্নপত্র কিছুটা সহজ হতে চলেছে বা অন্যভাবে বলতে গেলে হয়তো বা এবারের পরীক্ষায় মূল মূল বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হবে। খুব গভীর বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হবে না। সেটি বিবেচনা করেই গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর উপর ফোকাস রেখে প্রশ্ন-উত্তর পর্বকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে।
১. অন্ধকারময় যুগ কাকে বলে ? কেন ?
উত্তরঃ ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর সময় কালকে বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকারময় যুগ’ বলা হয়। সেই সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে তেমন কোনো সাহিত্য কর্ম সৃষ্টি হয়নি, তাই ওই সময়কে সাহিত্যের অন্ধকারময় যুগ বলা হয়।
২. বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের সময়কাল কত ?
উত্তরঃ ১২০১-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ, এই সময় কালকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ বলা হয়। কিন্তু সাহিত্যের বিচারে প্রকৃত মধ্যযুগের সময়কাল হল খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী। কেননা ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দী ছিল ‘অন্ধকারময় যুগ’ সেই সময়ে সাহিত্যের ইতিহাসে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি।
৩. চৈতন্যদেবের জন্ম কত সালে ?
উত্তরঃ ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৬ – ১৪ জুন ১৫৩৩ ।
৪. বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়, যথা –
উত্তরঃ
- প্রাক-চৈতন্য পর্ব অর্থাৎ চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী সময় (চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতাব্দী)
- চৈতন্য পর্ব (ষোড়শ শতাব্দী)
- চৈতন্যোত্তর পর্ব (সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দী)
৫. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা কে ?
উত্তরঃ বড়ু চন্ডীদাস। কাব্যটি প্রাক চৈতন্য যুগে রচিত।
৬. প্রাক চৈতন্য যুগে রচিত সাহিত্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য –
উত্তরঃ
- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন- বড়ু চন্ডীদাস
- শ্রীরাম পাঁচালী (কৃত্তিবাসী রামায়ণ/রামায়ণ পাঁচালী)- কৃত্তিবাস
- শ্রীকৃষ্ণবিজয়- মালাধর বসু
- বৈষ্ণব পদাবলি- বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস
৭. উত্তর চৈতন্য যুগের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মগুলো হল-
উত্তরঃ কাশীরাম দাসের মহাভারত, চৈতন্য জীবনীসাহিত্য, মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল প্রভৃতি।
৮. কোন সময়কালকে যুগসন্ধিক্ষণ বলা হয় ?
উত্তরঃ রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের মৃত্যু সময়কাল (১৭৬০) থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে যুগসন্ধিক্ষণ বলা হয়। এই সময়কালে বাংলা সাহিত্য মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগে পদার্পণ করে তাই এই সময়সীমাকে যুগসন্ধিক্ষণ বলা হয়।
৯. পঞ্চদশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের তিনটি শাখা হলো-
উত্তরঃ
- গীতিকবিতা বা পদাবলি
- অনুবাদ সাহিত্য শাখা এবং
- মঙ্গলকাব্য
১০. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে কবে কোথা থেকে আবিষ্কার করেন ?
উত্তরঃ শ্রী বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি আবিষ্কার করেন। তিনি বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামের অধিবাসী দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোপালঘর থেকে এই পুঁথিটি আবিষ্কার করেছিলেন। এটি রাধাকৃষ্ণ লীলা বিষয়ক প্রথম আখ্যানকাব্য।
১১. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রকৃত নাম কী ?
উত্তরঃ পুঁথিটির ভিতরে ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ লেখা একটি চিরকুট পাওয়া যায়। এই থেকে অনেক পণ্ডিত পুঁথিটির প্রকৃত নাম ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ বলে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু বসন্তরঞ্জন রায় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ‘ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ‘ নামে কাব্যটি সম্পাদনা করে প্রকাশিত করেন।
১২. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচনাকাল-
উত্তরঃ অনুমান করা হয় চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকে কিংবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই কাব্য রচিত হয়েছিল।
১৩. ‘গুণরাজখান’ কার উপাধি ছিল ?
উত্তরঃ মালাধর বসু ভাগবতের অনুবাদ সাহিত্য ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ রচনা করেন। কবির কবিত্ব প্রতিভা এবং কাব্যটির অসাধারণ সাহিত্যগুণ বিচার করে বাংলার সুলতান রুকনুদ্দিন বারবক শাহ কবিকে ‘গুণরাজখান’ উপাধি দেন।
১৪. বাংলা ভাষায় রামায়ণের প্রথম অনুবাদক কে ?
উত্তরঃ কৃত্তিবাস ওঝা। আনুমানিক ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া জেলার ফুলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তার অনূদিত রামায়ণের নাম ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ বা ‘শ্রীরাম পাঁচালী’। এটি বাংলা ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ রামায়ণ। পঞ্চদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে তিনি তাঁর কাব্য রচনা করেন বলে অনুমান করা হয়।
১৫. ‘অদ্ভুতাচার্যের রামায়ণ’ কে রচনা করেন ?
উত্তরঃ সপ্তদশ শতকের শেষভাগে সাঁতোলের রাজা রামকৃষ্ণের সভাকবি নিত্যানন্দ আচার্য। এটি চৈতন্য উত্তর যুগে রচিত।
১৬. ‘পাণ্ডববিজয় পাঞ্চালিকা’ কে রচনা করেন ?
উত্তরঃ কবীন্দ্র পরমেশ্বর দাস। বাংলার শাসনকর্তা হুসেন শাহের চট্টগ্রামের সেনাপ্রতি লস্কর পরাগল খানের আদেশে ১৮ পর্বে এই কাব্য রচিত হয়। তাই একে ‘পরাগলী মহাভারত’ও বলা হয়।
১৭. বাংলা ভাষায় মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে ?
উত্তরঃ কাশীরাম দাস।
১৮. কাশীরাম দাসের মহাভারতের নাম কী ?
উত্তরঃ কাশীদাসী মহাভারত বা ভারত পাঁচালী। আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দী দেশের দিকে অথবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কাব্যটি রচিত হয়েছিল। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে ১৮০১-০৩ খ্রিস্টাব্দে এই কাব্যের প্রথম চার পর্ব মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়।
১৯. শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যের রচনাকাল কত ?
উত্তরঃ কাব্যটি ১৪৭৩- ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত হয়েছিল।
২০. চৈতন্যদেব ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ পাঠ করেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় –
উত্তরঃ ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে।
২১. চৈতন্যচরিতামৃত কার লেখা ?
উত্তরঃ কৃষ্ণদাস কবিরাজ।
আরও পড়- Olympic Games History: অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস ও তার ৩ হাজার বছরের জীবনচক্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
আরও পড়- চর্যাপদ প্রশ্ন উত্তর
আরও পড়- বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রথম পর্ব
আরও পড়- WBCS পরীক্ষা কী ? রইল বিস্তারিত