Polygraph test meaning in bengali: পলিগ্রাফ টেস্ট কি ? মিথ্যা কথা বললেই ধরা পড়ে যাবেন ! মারাত্মক এই পরীক্ষা সম্পর্কে জেনে নিন ঝটপট

পলিগ্রাফ পরীক্ষা সাধারণত লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা (Lie detector test) নামে পরিচিত। কোনো ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তদন্তের স্বার্থে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখন ওই ব্যক্তি প্রশ্নের উত্তরে সত্যি কথা বলছে কি না তা যাচাই করার জন্য পলিগ্রাফ পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে অন্য ক্ষেত্রেও, যেমন অনেকে সময় চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তি যখন কোনো প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা কথা বলে তখন ওই ব্যক্তির মধ্যে কতগুলি শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে। যেমন, রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস, ত্বকের আর্দ্রতা (Skin conductivity), ঘাম নিঃসরণ ইত্যাদি। পলিগ্রাফ পরীক্ষার মাধ্যমে শারীরিক ওই পরিবর্তনগুলির পর্যবেক্ষণ করা হয়। যখন কেউ মিথ্যা কথা বলে তখন তার হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটে এবং কপালে, হাতের তালুতে ঘাম দেখা দেয়; এই পরিবর্তনগুলি পলিগ্রাফ পরীক্ষায় ধরা পড়ে। এই পরিবর্তন দেখেই অভিযুক্ত ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলছে কি না তা অনুমান করা হয়। যখন কেউ সত্য কথা বলে তখন তার সমস্ত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি স্থিতিশীল থাকে। অতএব পলিগ্রাফ পরীক্ষা একটি বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা। তবে পরীক্ষাটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিশ্বজুড়েই বিরাট বিতর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন- মিশরের পিরামিড রহস্য ফাঁস ! পিরামিড সম্পর্কে অজানা তথ্য ভাণ্ডার

পলিগ্রাফ পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি

পলিগ্রাফ পরীক্ষাটি সাধারণত কয়েকটি যন্ত্রের সমন্বয়ে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয় একটি নিউমোগ্রাফ যা শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যকলাপ পরিমাপ করে, রক্তচাপ পরিমাপের জন্য একটি রক্তচাপ মাপার যন্ত্র এবং আঙ্গুলের সাথে সংযুক্ত ইলেকট্রোড যা ত্বকের আর্দ্রতার পরিবর্তন পরিমাপ করে (known as the galvanic skin response)। প্রশ্ন – উত্তর পর্ব চলাকালীন ব্যক্তির শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণ এবং গ্রাফে রেকর্ড করা হয়।

প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা কথা বললে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, যা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের লক্ষণগুলো প্রকাশ ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, মিথ্যা বলার সময় রক্তচাপ কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে, শ্বাসপ্রশ্বাসের ধরণে পরিবর্তন হতে পারে, অথবা ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম জমতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে, তাই ব্যক্তি সহজে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ফলে মিথ্যা ধরা পড়ে যায়।

পলিগ্রাফ টেস্ট কিভাবে হয়

মূল পরীক্ষার আগে সাধারণত একটি প্রাক-পরীক্ষা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হল পরীক্ষার্থীর শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়াগুলির একটি বেসলাইন স্থাপন করা (Establish a baseline)। অর্থাৎ স্বাভাবিক কথাবার্তার ক্ষেত্রে ব্যক্তির হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ইত্যাদি কেমন থাকছে তা নির্ধারণ করা। এই পর্যায়ে, পরীক্ষক পরীক্ষার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন, প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করেন এবং কিছু সহজ প্রশ্ন (Control questions) জিজ্ঞাসা করেন। এগুলো এমন প্রশ্ন যার উত্তর জানা থাকে।

পরীক্ষার সময় বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। কিছু প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ে এবং কিছু প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। বা এমন কিছু প্রশ্ন যা পরীক্ষক ব্যক্তির শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের তুলনামূলক পরিমাপ করার জন্য জিজ্ঞাসা করতে পারেন। প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলাকালীন ব্যক্তির বিভিন্ন শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলির তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করা হয় এবং তার ভিত্তিতে প্রদত্ত উত্তরের সত্য – মিথ্যা যাচাই করা হয়।

 বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতা

পলিগ্রাফ পরীক্ষার নির্ভুলতা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই পরীক্ষার যারা সমর্থক, তাদের দাবি, পলিগ্রাফের ফলাফল অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও সঠিক এবং এর সাফল্যের হার প্রায় ৯০ শতাংশ। তবে সমালোচনাও কম নেই। পলিগ্রাফ পরীক্ষার ধারণাটি মানুষের আবেগের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এই ধারণার বৈজ্ঞানিক বৈধতা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিতর্ক চলছে। সমালোচকেরা পলিগ্রাফের ফলাফলকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করতে নারাজ। পলিগ্রাফ পরীক্ষার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি মূলত করা হয় সেগুলি হল-

  • ধারাবাহিকতা: গবেষণায় দেখা গেছে, পলিগ্রাফ পরীক্ষায় ফলাফল সব সময় একই থাকে না। একই ব্যক্তির উপর যখন বারবার পরীক্ষা করা হয় তখন ব্যক্তির শারীরিকবৃত্তীয় পরিবর্তনগুলি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অর্থাৎ একই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রথম পরীক্ষায় যেখানে ব্যক্তির হৃদস্পন্দন বা রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল সেখানে তৃতীয় বা চতুর্থ পরীক্ষায় ব্যক্তির হৃদস্পন্দন বা রক্তচাপে তেমন কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। আবার পরীক্ষকের দক্ষতার উপরেও এই পরীক্ষার ফলাফল অনেকাংশে নির্ভর করে।
  • আত্মনিয়ন্ত্রণ: ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমে অনেকেই নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। গুপ্তচরদের ক্ষেত্রে শোনা যায় তাদের নাকি পলিগ্রাফ পরীক্ষাকে ফাঁকি দেওয়ার ট্রেনিং দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক ব্যক্তিই আছেন যারা অত্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে নিপুণতার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলতে পারেন।
  • নৈতিকতার প্রশ্ন: পলিগ্রাফ পরীক্ষা অত্যন্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এর গভীর প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে।    যার পরীক্ষা নেওয়া হয় তার ব্যক্তিগত জীবনের বহু তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ পায় যা ব্যক্তি নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার পরিপন্থী। পরীক্ষার ভুল ফলাফলের উপর নির্ভর করে অনেক সময় নির্দোষ ব্যক্তি সবার নজরে দোষী সাব্যস্ত হন। তাই এই পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠে।

শেষ কথা

পলিগ্রাফ পরীক্ষা একশো শতাংশ নির্ভুল নয়। তবে সঠিক পরিবেশ ও পরিকাঠামোয় দক্ষতার সঙ্গে এই পরীক্ষা নেওয়া হলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই পরীক্ষায় সঠিক ফল পেতে গেলে সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরুরী। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে হয়তো বা অদূর ভবিষ্যতে পলিগ্রাফ পরীক্ষার মানও উন্নত হবে, তখন হয়তো এই পরীক্ষা খুবই নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে সঠিক অপরাধী সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এটি বিরাট হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন- Olympic Games History: অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস

আরও পড়ুন- Olympic logo meaning: অলিম্পিকের পাঁচটি রং কিসের প্রতীক

আরও পড়ুন- Yogyashree Scheme: যোগ্যশ্রী প্রকল্প এর মাধ্যমে ফ্রিতে চাকরির ট্রেনিং দিবে সরকার

সবার সঙ্গে শেয়ার করুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a comment